১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বিসিসি থেকে বেতন নেন সাবেক মেয়রের বাসার কাজের লোক উজিরপুরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সম্পাদকের নামে হ*ত্যাচেষ্টা মামলা ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল : ফিল্ম না থাকায় দেড় মাস ধরে এক্স-রে সেবা বন্ধ মঠবাড়িয়া বিএনপি নেতা দুলালকে দল থেকে বহিষ্কার বরগুনায় ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়কদের মধ্যে সং*ঘ*র্ষ, আ*হ*ত ৪ হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে চাইলে প্রতিদিন বাদাম খান পটুয়াখালীতে জমির বি*রোধে ছোট ভাইয়ের হাতের কব্জি কে*টে নিলো বড় ভাই বরিশালে মিলল মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ম*রদেহ, পরিবারের দাবি হ*ত্যা বরিশালে ৮ কেজি গাঁজাসহ মাদকবিক্রেতা আটক বরিশালে এসএসসির সিলেবাস কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

অপরাধ দমনে ইসলামী বিধানের বৈশিষ্ট্য

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

প্রত্যেক মানুষ সমাজে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। সমাজ অপরাধমুক্ত থাকুক, এটা সবাই কামনা করে।

তবু কিছু মানুষ অন্যের অধিকার খর্ব করে অপরাধ করে, সামাজিক শান্তি নষ্ট করে। তাই ইসলামী বিধান মতে সমাজ তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো, যেসব কারণে অপরাধ সংঘটিত হয় তা থেকে সমাজকে মুক্ত রাখা। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ধারা চালু রাখা। মানুষের মন-মানসিকতায় মহান আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। হৃদয়ের গহিনে এ কথা বসিয়ে দেওয়া যে অপরাধ যত গোপনেই করা হোক, আল্লাহ তা দেখেন। পরকালে এর জবাবদিহি করতে হবে, শাস্তি ভোগ করতে হবে।
পরকালের শাস্তি ইহকালের শাস্তি অপেক্ষা অনেক কঠিন ও স্থায়ী। এর পরও কেউ অপরাধ করলে ইসলাম তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দানের পক্ষপাতী। ইসলামে শাস্তির বিধান তিন ধরনের

১. যে শাস্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তবে কার্যকর করার দায়িত্ব অপরাধীর নিজের ওপর ন্যস্ত করেছেন। যেমন—বিভিন্ন ধরনের কাফফারা। ২. যে শাস্তি কোরআন বা হাদিস দ্বারা নির্দিষ্ট। তবে তা কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে বিচারক বা সরকারের নিজস্ব মতামতের কোনো সুযোগ নেই। যেমন—হদ্দ ও কেসাস।

৩. যেসব অপরাধের শাস্তির কোনো পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি; বরং বিচারকের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিচারক স্থান, কাল ও পরিবেশ বিবেচনা করে অপরাধ দমনের জন্য যেমন ও যতটুকু শাস্তির প্রয়োজন মনে করেন ততটুকুই দেবেন। শরিয়তের পরিভাষায় তাকে ‘তাজির’ বলা হয়।

অপরাধ দমনে ইসলামী বিধানের বৈশিষ্ট্য

প্রতিরোধমূলক : ইসলাম অপরাধের পথ খোলা রেখে অপরাধ করার সুযোগ দেয় না; বরং অপরাধের কারণ যাতে সংঘটিত না হয় তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেমন—খুনখারাবি রোধে সামাজিক দ্বন্দ্ব-কলহের অবসান ঘটায়। চুরি-ডাকাতি রোধে সম্পদের সুসম বণ্টনের নির্দেশ দেয়। ব্যভিচার রোধে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও যৌন প্রবৃত্তি উদ্দীপক সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

ইনসাফভিত্তিক : ইসলাম বিচারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরাধী ও যাদের বিরুদ্ধে সে অপরাধ করেছে উভয়ের অবস্থা বিবেচনা করে। ইসলাম চোরের হাত কেটে দিতে বলে। কিন্তু যেখানে সামান্যতম সন্দেহ থাকে যে চোর ক্ষুধার তাড়নায় চুরি করেছিল, সেখানে কিছুতেই এ শাস্তি দেওয়া হয় না। সামান্য জিনিস চুরির জন্যও হাত কাটার নির্দেশ দেয় না। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে ১০ দিরহামের (প্রায় তিন হাজার টাকা) কম পরিমাণ চুরির ক্ষেত্রে হাত কাটা হবে না।

আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান : ছোট-বড়, ধনী-গরিব, সাদা-কালো সবার জন্য ইসলাম একই শাস্তির বিধান দেয়। দেশের কোনো ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, বনু মাখজুম গোত্রীয় এক মহিলা চুরি করেছিল। এতে কুরাইশরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারা বলাবলি করে, কে নবীজি (সা.)-এর কাছে এ ব্যাপারটি উত্থাপন করবে? তাঁর প্রিয়পাত্র উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) ব্যতীত আর কে এ সাহস করবে? এরপর উসামা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর দণ্ডবিধিসমূহ থেকে এক দণ্ডের ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’ তারপর তিনি দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বেকার লোকদের নীতিও ছিল যে যখন কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোনো দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করে, তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দেব। ’ (মিশকাত, হাদিস : ৩১৩)

সংশোধনমূলক : আল্লাহর হক সম্পর্কিত অপরাধের জন্য ইসলাম অপরাধীকে তাওবা করার সুযোগ দেয়। খালেস নিয়তে তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। ফলে সে নিজে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ পায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো; আন্তরিক তাওবা। তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন…। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)

আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেও প্রতিদিন অধিক হারে তাওবা করতেন। আবু বুরদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-এর সাহাবা আগার (রা.) থেকে শুনেছি, তিনি ইবনে উমার (রা.)-এর কাছে হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো। কেননা আমি আল্লাহর কাছে প্রতিদিন একশতবার তাওবা করে থাকি। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫২)

কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক : ইসলাম অপরাধের ক্ষেত্রভেদে বেত্রাঘাত, রজম ও শিরশ্ছেদের বিধান দেয়। এগুলো কঠোর ও কঠিন শাস্তি। এ শাস্তি জনসমক্ষে দিতে হয়। যাতে সবাই শাস্তির কঠোরতা দেখে অপরাধ থেকে বিরত থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পারো। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭৯)

সর্বশেষ