২রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

অবশেষে সেই খালে ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু, খুশি দু’পাড়ের বাসিন্দারা

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী)
রসুলবাড়িয়া ও মাদারবুনিয়া পাশাপাশি দুই গ্রাম। এর মাঝ দিয়েই বয়ে গেছে মাদারবুনিয়া খাল। সেই খাল পারাপারে ছিল ছোট্ট একটি নৌকা। তবে নৌকার কোন মাঝি ছিল না, রশি টেনে হেলেদুলে একপাড় থেকে অন্যপাড় যেতে হতো।
গ্রামবাসীর বহুদিনের দাবি ছিল, দু’পাড়ের মানুষের সহজ যোগাযোগের জন্য খালটিতে সেতু নির্মাণের। কংক্রিট কিংবা লোহার সেতু না হলেও দীর্ঘদিন পর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত ওই খালে ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু হয়েছে। এতেই খুশি সেখানকার মানুষ। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল দৈনিক যুগান্তরে ‘রশি টেনে নৌকায় পারাপার’ এবং ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ‘রাঙ্গাবালীতে রশি টেনে নৌকায় খাল পারাপার জীবনবাজির শিক্ষা!’ শিরোনামে দুইটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, মাদারবুনিয়া খালের দুই পাড়ে প্রায় ২-৩ হাজার মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে দুই শতাধিক। গ্রামবাসীর উদ্যোগে দীর্ঘদিন মাদারবুনিয়া খাল পারাপারের জন্য নৌকা দেওয়া হয়। ওই নৌকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছিল ওইসব শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। স্থানীয়দের এই দুর্ভোগ লাঘব করতে কাঠের সেতু নির্মাণের এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিন লাখ ২৯ হাজার ৯৫০ টাকা ব্যয়ে শ্রমিক দিয়ে প্রায় তিন সপ্তাহে মাদারবুনিয়া খালে প্রায় ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদের উদ্যোগে এ সেতু নির্মাণ হয় । এক সপ্তাহ আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতু দিয়ে লোকজন পারাপার শুরু হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, রসুলবাড়িয়া ও মাদারবুনিয়ার যে খালটি রয়েছে এটিতে দীর্ঘ ৪০-৫০ বছর একটি খেয়া নৌকা ছিল। এখানে অন্য কোন যাতায়েত ব্যবস্থা ছিলো না। অনেক সময় খেয়া নৌকাটিও ডুবে থাকত। মাঝে মধ্যে নৌকা মেরামতের জন্য তোলা হতো। তখন কলাগাছের ভেলায় পারাপার হতো লোকজন। অনেক জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দিলেও কোন সুরহা হয়নি। যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের কারণে বিষয়টি নজরে এসেছে। অবশেষে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন। রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, খালের ওপারে মাদারবুনিয়া এলাকায় আমাদের বিদ্যালয় পড়ুয়া ১৫০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী আছে । রশি টেনে খেয়া নৌকায় পাড় হতে গিয়ে অনেকসময় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি কয়েক বছর আগে দুই শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ কারণে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকরা শঙ্কায় থাকত।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, মাদারবুনিয়া খালে দীর্ঘদিন যাবত ওখানকার লোকজন একটি রশিতে বাঁধা খেয়া নৌকা পেড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। স্থানীয় লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৫০ টাকা যোগান দিয়ে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেছি। ওখানে যাতে একটি স্থায়ী সেতুর নির্মাণ হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করছি। যাতে দ্রুত গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হয়।
এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিজানুল কবির বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জায়গা পরিদর্শণ করে আয়রণ ব্রিজ প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সর্বশেষ