কাওসার হামিদ,তালতলী(বরগুনা)প্রতিনিধিঃ
ভয়াল ১২ নভেম্বর বরগুনার তালতলী উপজেলার উপকূলবাসীর জন্য বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। ৫০ বছর পূর্বে ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয় এ অঞ্চলের জনপদ। প্রাণ হারায় ১০ লাখেরও বেশী মানুষ। ভেসে যায় লক্ষ লক্ষ গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী।ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠের ফসল, উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। মুহূর্তেই পুরো উপকূল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফেরে উপকূলবাসীর মনে।
সেদিন সকাল থেকেই গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরপর রেডিওতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের খবর প্রচার করা হয়েছিল। উপকূলে পর্যাপ্ত রেডিও না থাকায় অধিকাংশ মানুষই সেদিন মহাবিপদ সংকেতের খবরটি জানতে পারেনি। সন্ধ্যায় গুড়ি-গুড়ির বৃষ্টির সাথে হালকা বাতাস বইতে শুরু করে। তখনও উপকূলবাসী বুঝতে পারেনি কি হতে যাচ্ছে। গভীর রাতে প্রায় ২২২ কিলোমিটার গতিবেগে মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল থাবায় তালতলীর উপকূলের সব লন্ড ভন্ড করে দেয়। এতে উপকূলের ১০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ বিসর্জন দেয়। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি ও স্বজনহারা উপকূলবাসীকে এখনও কাঁদায়।
১২ নভেম্বর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে বরগুনা জেলার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ওই রাতেই উপকূলীয় বরগুনা জেলাসহ ভোলা, লীপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলোচ্ছ্বাসে ৮ থেকে ১০ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য মানুষ। পথে প্রান্তরে উম্মুক্ত আকাশের নীচে পড়েছিলো কেবল লাশ আর লাশ। চারিদিকে লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষ গুলোকে। কুকুর, শিয়াল আর শকুন খেয়েছে কত লাশ তার কোন ইয়ত্তা নেই। মরনপুরীতে রূপ নেয় গোটা উপকূলীয় অঞ্চল। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফেরে উপকূলবাসীর মনে।
এদিকে ১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানী ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিবসটি পালন করে থাকে। কিন্তু এতবড় একটি ঘটনা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় না। যে কারণে এ দিনটিকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি উঠেছে।