নাজমুল হক মুন্না :
আজ ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বাবুগঞ্জবাসীর অহংকার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’র শাহাদাৎ বার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন তিনি। তার পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার মা সাফিয়া খাতুন। ৩ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ২ য়। প্রাথমিক শিক্ষা জীবণ শুরু করেছিলেন মুলাদী উপজেলার মাহামুদজান বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে আই এস সি পাশ করে বিমানবাহিনীতে চাকরির চেষ্টা করে চোখের সমস্যায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় পাকিস্থান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৮ সালে ২ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুকালিন সময় তিনি পাকিস্থানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিতে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন। দুর্গম পথ অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ৭ নং সেক্টরে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন এবং সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন। রাণাঙ্গনে অসাধারন কৃতিত্ব ও বীরত্বের কারনে তাকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দায়ীত্ব দেয়া হয়। ১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর লেফটেন্যান্ট কায়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল সহ ৫০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল চাঁপাইনাবাবগঞ্জের পশ্চিম বারঘরিয়া এলাকায় অবস্থান নেন। ১৪ ডিসেম্বর ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কয়েকটি নৌকা যোগে রেহাইচর এলাকা থেকে মহানন্দা নদী অতিক্রম করে উত্তর দিক থেকে পালাক্রমে শত্রু পক্ষের অবস্থান দখল করে দক্ষিন দিকে এগোতে থাকেন সফল ভাবে। আক্রমন পরিকল্পনা এমন ভাবে করেছিলেন যাতে উত্তর দিক থেকে আক্রমন করলে দক্ষিন দিকের শত্রু পক্ষ টের না পায়। সে মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছিলেন বীরদর্পণে। জয় প্রায় সুনিশ্চিত, হটাৎ বাঁধের উপর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সিভিল আর্মড ফোর্সের একটি দল চর এলাকায় সমবেত হয়ে অবিরাম গুলিবর্ষন শুরু করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। জীবনের পরোয়া না করে দেশের ও জাতীর স্বার্থে স্বাধীন বাংলার স্বপ্নে এগিয়ে যান বীরত্ব নিয়ে সামনের দিকে। পরাস্ত হতে থাকে পাক হানাদাররা। হঠাৎ, শত্রু পক্ষের একটি গুলি ভেদ করে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপাল। লুটিয়ে পরেন তিনি মাটিতে। নিয়তির ইতি টেনে শহীদ হন ঘটনাস্থলেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ চত্বরে সমাহিত করা হয় বাবুগঞ্জের এই বীর সন্তানকে। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও সাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ দেয়া হয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও উপাধি। বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হলেন তিনি।
