হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
গত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ (মঙ্গলবার) মধ্যরাত থেকে ইলিশ শিকারে সাগরে যাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছে বরগুনার আমতলী ও সমূদ্র উপকূলীয় তালতলী উপজেলার ১৩ হাজার ৫৩১ জন জেলে।
সরেজমিনে আজ (বুধবার) দু’উপজেলার বিভিন্ন জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখাগেছে, ২২ দিন অপেক্ষার পরে বিভিন্ন ঘাট থেকে জেলেরা মাছ শিকারের উদ্দেশে সাগরে যাত্রা শুরু করার জন্য বাজারসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বুধবার মধ্যরাত থেকেই ইলিশ শিকারে জেলেরা সাগরে যাত্রা শুরু করবে।
দু’উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাগেছে, সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় দু’উপজেলার নিবন্ধিত ১৩ হাজার ৫৩১ জন জেলেকে জনপ্রতি ২০ কেজি করে মানবিক খাদ্য সহায়তার চাল দেয়া হয়েছে। তারপরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দু’উপজেলার অনেক জেলে মাছ শিকার করছেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারাদন্ড ও জরিমানা করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ৪ জন জেলেকে ৭ দিনের কারাদন্ড ও ২ জন জেলেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় অবৈধ কারেন্ট জাল আটক করে ধ্বংস করা হয়েছে ০.৫৬৯ লক্ষ ও অন্যান্য (সাইন, চরঘেরা) ১৪টি জাল আটক করা হয়েছে।
অপরদিকে তালতলী উপজেলায় কোন জেলেকে আটক বা জরিমানা করা না হলেও অবৈধ কারেন্ট জাল আটক করে ধ্বংস করা হয়েছে ৪৪ হাজার মিটার ও অন্যান্য (সাইন, চরঘেরা) ৭৫টি জাল আটক করেছে মৎস্য বিভাগ।
দু’উপজেলার উপড় দিয়ে প্রবাহিত পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে শত শত মাছ ধরার ট্রলার নোঙর করে আছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় ফের সাগরে ইলিশ শিকারে জাল ফেলার অপেক্ষায় খোশ মেজাজে রয়েছে জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে ধার-দেনা করে নিজ নিজ ট্রলারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় মুদি দোকান থেকে বাকীতে চাল, ডাল ও তৈলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছেন। সাগরে ইলিশ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে জেলেরা এতটা ব্যস্ত যে দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের।
তালতলী উপজেলার ফকিরহাট জেলে ও মৎস্য সমবায় সিমিতির সভাপতি ও ফকিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সুলতান আহম্মেদ ফরাজী বলেন, সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিটি জেলে মাত্র ২০ কেজি করে চাল দিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে তাদের সংসার চালিয়েছেন। ইলিশ শিকার না করে দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটিয়েছে। আজ মধ্যরাত থেকে সাগরে ও নদীতে ইলিশ শিকার করতে পারবে বলে জেলে পল্লীগুলোতে আনন্দের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, আমতলীসহ উপকূলের জেলেরা নিজেরাই এখন অনেকটা সচেতন হয়েছেন। আমরা দিন-রাত মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করেছি। তারপরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৪ জন জেলেকে ৭ দিনের কারাদন্ড ও ২ জেলেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি। এসময় ০.৫৬৯ লক্ষ মিটার কারেন্ট ও ১৪ টি অন্যান্য (সাইন, চরঘেরা) জাল জব্দ করেছি।