২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মানসিক রোগী তালতলীর ইমরান বরিশালে প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় ৩ সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দাফনের ৩৫ দিন পর মানসুরার লাশ উত্তোলন ! মঠবাড়িয়ায় রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ২‘শ বছরের ঐতিহ্য “কুঠিবাড়ি” ভুতুড়ে অমাবস্যা--- বিজন বেপারী গলাচিপার চেয়ারম্যান-ইউএনও জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান ও প্রশাসন নির্বাচিত বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ (সা.) --হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী বরগুনায় মোটরসাইকেল চালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার বরিশালে আটক চোর নিয়ে চুরির মালামাল উদ্ধার পিরোজপুর থানা পুলিশকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও মামলার চার্জশীটে ব্যবসায়ীর নাম

উজিরপুরে রিমান্ডে নিয়ে নারীকে যৌন হেনস্তা: মেডিকেল রিপোর্টে মেলেনি আলামত

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের উজিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হত্যা মামলার আসামি নারীকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন হেনস্তা ও শারীরিক নির্যাতনের কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নারীর পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে এমন প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। গত ৩ জুলাই শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে আদালত এবং পুলিশের কাছে পাঠানো মেডিকেল রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ওই রিপোর্টটি করেছেন হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ইউনিট-২’র একজন নারী ইন্ডোর মেডিকেল অফিসার মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারী। রিপোর্টে উল্লেখ আছে, নারীর শরীরে আঘাতের যে চিহ্ন দেখা গেছে, তা অনেক পুরানো।

আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়টি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করলেও এতে কী উল্লেখ আছে তা তিনি দেখেননি বলে জানিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় এ নিয়ে রেঞ্জ পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকায় পরকীয়া প্রেমিকার বাড়ির পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় বাসুদেব চক্রবর্তী টুলু নামের এক ব্যক্তির লাশ। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বরুন চক্রবর্তী বাদী হয়ে ২৭ জুন উজিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নিহতের পরকীয়া প্রেমিকা মিনতি বিশ্বাস মিতুকে একমাত্র আসামি করা হয়।

পুলিশ জানায়, ২৮ জুন অধিকারীকে গ্রেপ্তার পরবর্তী ২৯ জুন পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালত নারীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই মিনতি বিশ্বাসকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি/তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলাম।

আদালতে বিচারকের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিনতি। বলেন, ৩০ জুন সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) তাকে নিজের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে জোর করে হত্যা মামলার স্বীকারক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। এজন্য নারীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন নির্যাতন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিছুক্ষণ পরে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে এনে মারধর এবং পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেও ১৫/২০ মিনিট পেটায়।

আদালত অভিযোগ শুনে ওই নারীকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং তাকে নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মেডিকেল প্রতিবেদন দিতে বলেন শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালককে। নির্দেশ অনুযায়ী গত ৩ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে এই ঘটনায় থানা পুলিশের ওসি আফজাল হোসেন, ওসি তদন্ত মাইনুল ইসলামকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে।’

শেবাচিমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দুই কনুই, গোড়ালিসহ ৬টি স্থানে ৬ থেকে ৮টি আঘাত রয়েছে। তবে সবগুলোই অনেক পুরানো আঘাত। সবমিলিয়ে আঘাতের গুরুত্ব সিম্পল (নরমাল) বলে মেডিকেল রিপোর্টে রোগীর ইতিহাসে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। কিন্তু আঘাতগুলো কতটা পুরানো সে বিষয়ে উল্লেখ নেই।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত নির্দেশে দিয়েছে একজন নারী চিকিৎসক দিয়ে ওই ভিকটিমের পরীক্ষা করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে। নির্দেশনা অনুযায়ী নারী চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই চিকিৎসক মেডিকেল রিপোর্ট খামে ভরে আমাকে দিয়ে গেছেন। তিনি যেভাবে দিয়েছেন সেভাবেই আদালতে পাঠিয়েছি। রিপোর্টে কি আছে সেটা আমার দেখার সুযোগ হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাসুদেব নামে যাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সাথে দীর্ঘ দিন ধরেই পরকীয়ার সম্পর্ক চলে আসছিল মিনতির। বাসুদেব পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। পরকীয়ার সূত্র ধরে বাসুদেবের কাছ থেকে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বাসুদেব ট্রাক চালোনার কাজ ছেড়ে দেন। এর পর থেকেই দুজনের মধ্যে সম্পর্কের দুরত্ব তৈরি হয়।

বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উজিরপুরের দুই ওসিকে ক্লোজড করা হয়েছে। একজন এএসপি এবং দুজন ওসিসহ ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ডিআইজি কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তে সবকিছু পরিস্কার হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সর্বশেষ