বরিশাল বাণী: জেলার বিভিন্ন আড়তে চলছে লবণজাত করে চামড়া সংগ্রহের কাজ। বিগত সময়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়ার বাজারে আধিক্য থাকলেও এবারে আড়তে আসা বেশিরভাগ চামড়াই লিল্লাহ বোডিং ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সংগ্রহ করা।
সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দর কমে যাওয়ায় মাঠপর্যায়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কোনো প্রভাব নেই। আর এ কারণে কোরবানির পশুর চামড়া সরাসরি মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং-এ দান করেছেন কোরবানিদাতারা।
তবে সরকার নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বরিশালে চামড়ার দাম কম হওয়ায় হতাশ চামড়া সংগ্রহকারীরা।
চামড়া সংগ্রহকারী মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগেও বরিশালে বেশ ভালো দামে চামড়া বিক্রি করা যেত। তখন পাড়া মহল্লায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বেশ তোড়জোড় ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চামড়ার বাজারে মূল্য ধ্বস নামায় এখন আর তাদের দৌরাত্ম্য নেই। পশুর চামড়া সহসাই মাদরাসার অনুকূলে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি হয়েছে যেখানে আমরা চামড়া নিয়ে আসলেই দাম নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। শ্রমিক দিয়ে চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণে খরচ বাড়ার অজুহাতে এবারে চামড়া প্রতি ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা দেওয়ার কথা বলছেন তারা। মাঠ পর্যায়ে আমাদের চামড়া সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। তাই তারা যা দাম বলছেন তাতেই দিতে হচ্ছে।
সংগ্রহকারীদের অভিযোগ বরিশালে যারা ব্যবসা করছেন তারাই সিন্ডিকেট করছেন। একটা চামড়া যেখানে গত বছর ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটি এবার বলছে ৩০০ টাকা। সিন্ডিকেট না হলে যে কয়েকজন চামড়া কিনছেন তারা সবাই একই দাম বলেন কিভাবে?
মাদরাসার হয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা শতাধিক চামড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু চামড়ার যে দাম বলা হচ্ছে, সেই দরে দিলে খরচই উঠবে না। তাহলে মাদরাসার তো কিছুই থাকবে না। আমাদের ও বাচ্চাদের শ্রমই বৃথা যাবে। আগে যেখানে একটি বড় চামড়া বিক্রি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকাও পাওয়া যেতো, সেখানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বলছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই রেটে বিক্রি করা তো সম্ভব না।
তিনি বলেন, এই কাজে এতিমখানার বাচ্চার পরিশ্রম করে। ওদের সহযোগিতার জন্য আমরা মাদরাসায় কিছু চামড়া পাই, সেই চামড়া নিয়েও দুর্ভোগ চলছে। আমরা চাই ন্যায্য মূল্যে চামড়াটা বিক্রি করতে। গত বছর যেখানে বড় গরুর চামড়া প্রতি সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত পেয়েছি, সেখানে এবার ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকাও বলছে না।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সবকিছুর দাম বাড়ছে, সেখানে চামড়ার দাম কমছে! এটা কিভাবে সম্ভব?
যদিও চামড়া ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, সরকার ট্যানারি মালিকদের যে দর ধরে দেয়, সেই দামে তারা আমাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে না। তারা যে চামড়ার দাম দিয়েছে সেটা লবণজাত আর আমরা কিনছি কাঁচা মানে লবণ ছাড়া। আমরা সেই চামড়াগুলো শ্রমিক খাটিয়ে প্রাথমিক প্রসেস শেষে লবণ দিয়ে ট্যানারি উপযোগী করে সংগ্রহ করছি।
তার কাছে আসা বেশির ভাগ কোরবানির পশুর চামড়া লিল্লাহ বোডিং ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সংগ্রহ করা জানিয়ে তিনি বলেন, এরআগেও সরকার যে দাম দিয়েছে তাতে ট্যানারির লোকজন চামড়া কিনেনি। তারা আমাদের অনেক কম দিয়েছে। ৩৫-৪০ টাকা বলেও আমাদের লবণজাত করা চামড়ায় ২০-২২ টাকা স্কয়ার ফিট দিয়েছে। এটা দেখার কেউ নেই। আবার লবণের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে, বাড়ছে শ্রমিকের মজুরি। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে চামড়ার দর বেশি দিব? আমরা দাম পেলে সংগ্রহকারীদের দিতে সমস্যা নেই।
এদিকে নগরের পদ্মাবতী এলাকার ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে আগের আটকে থাকা পাওনা টাকা না পেয়ে চামড়া সংগ্রহ করছেন না। তাদের দাবি, বছরের পর বছর ধরেও পাওনা টাকা না পেয়ে বেশিরভাগেই যেমন ব্যবসা পরিবর্তন করছেন, তেমনি অনেকে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্বও হয়েছেন। তাই এ ব্যবসায় এখন আর কারও আগ্রহ নেই। মাত্র দুজন ব্যবসায়ী এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করছেন।