অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ জন নার্স। এর মধ্যে একজন সহকারী নার্স, পাঁচজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও দুইজন নার্সিং সুপারভাইজার রয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন চলমান করোনামহামারীর এসব সম্মুখযোদ্ধা।
সহকর্মীদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটসের সেক্রেটারি সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন নার্সরা। সংক্রমণ ও মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়েই কাছে থেকে রোগীদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে হচ্ছে তাঁদের। এজন্য নার্সদের আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই। এই দুঃসময়ে রোগীদের পাশে থাকতে পারাটাই তাঁদের জন্য গর্বের বিষয়।
আট জন নার্সের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিএমএর দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহা. শেখ শহীদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫৫৪ জন নার্স। সংক্রমিত এসব নার্সের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে আবারও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। তবে কেউ কেউ এখনো করোনার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএমএসহ নার্সেস সংগঠন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আট নার্সের তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার শেফালী রানী দাশ। গত ২১ মে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শহরের আমলা পাড়ায় নিজ বাসায় মারা যান তিনি।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মশিউল আলম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘গত ২৪ এপ্রিল ওই নার্সের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ৮ ও ১৩ মে দুই দফা নমুনা পরীক্ষায় তাঁর নেগেটিভ ফল আসে। আমরা তাঁকে করোনামুক্ত সার্টিফিকেট দিয়েছিলাম। আট দিনের মাথায় কি কারণে মারা গেলো আমরা নিশ্চিত না। তবে করোনার উপসর্গ ছিল।’
২. সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. রুহুল আমিন গত ২৯ মে করোনা নিবেদিত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ২৯ মে সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই রাতে মারা যান তিনি।
৩. প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত তিন জুন মারা যান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার রেহানা বানু।
৪. নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স মীরা রাণী দাশ (৫৪) গত ১১ জুন বেলা ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে সাজেদা আইসোলেশন হাসপাতালে মারা যান। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাসহ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের সন্তান মীরা রাণী।
৫. মাদারীপুর সদর হাসপাতালের সহকারী নার্স মো. শহিদুল ইসলাম (৫২) গত ১৪ জুন ভোর রাতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, সহকারী নার্স মো. শহিদুল ইসলাম করোনা ভাইরাস পজিটিভ হওয়ায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৩ জুন অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পর দিন ভোররাতে সেখানে তিনি মারা যান।
৬. গত দুই জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স জহুরুল ইসলাম (৪৩)।
করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত ১৭ জুন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন কুমিল্লার তিতাস থানার নাগেরচর গ্রামের জহুরুল। এর পর থেকে বাঞ্ছারামপুরে নিজ বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ২০ জুন রাতে তাঁকে মুগদা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে ২৭ জুন তাঁর করেনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
৭. গত ছয় জুলাই মারা যান সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসীমা পারভীন। সকাল ৮টার দিকে একই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান করোনার চিকিৎসায় নিয়োজিত এ জ্যেষ্ঠ নার্সিং কর্মকর্তা।
হাসপাতাল সূত্রে জানায়, গত ৩১ জুন অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই নার্সকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর ১ তারিখের নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
৮. গত ২৯ জুন রাত একটার দিকে মারা যান মারা যান যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স রওশন আরা খাতুন। তবে তাঁর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।