৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গৌরনদী ইউসিসিএ লিমিটেডের গোপন নির্বাচনঃ একমাসের মাথায় বাধ্যতামূলক পদত্যাগ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

গৌরনদী প্রতিনিধিঃ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ইউসিসিএ লিমিটেড (বিআরডিবি) ব্যববস্থাপনা কমিটির নির্বাচন ২০২১ দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কাগজপত্র পত্রে নির্বাচন দেখিয়ে সভাপতিসহ ৭টি পদে নির্বাচিত করার অভিযোগ উঠেছে গৌরনদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার ও গৌরনদী উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসানের বিরুদ্ধে। সাধারন সদস্য ও ভোটারদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা ৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত ঘোষনা করেছে। এক মাস পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে বিক্ষুব্ধ সাধারন সদস্য ও ভোটারদের হাতে লাঞ্চিত হন গৌরনদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল বাশার ও উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসান । এক পর্যায়ে চাপের মুখে গতকাল শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত কমিটির কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

সাধারন সদস্য, ভোটার ও গৌরনদী উপজেলা সমবায় ও পল্লি উন্নয়ন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলা ইউসিসিএ লিমিটেড (বিআরডিবি) ব্যববস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয় মার্চ মাসে। নিয়ম অনুযায়ী সকল সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে সাধারন সভা করে সভায় ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন সিদ্বান্ত নিতে হবে। গৌরনদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল বাশার ও গৌরনদী উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসান বিষয়টি গোপন রেখে কাগজপত্রে সাধারন সভঅ ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গৌরনদী ইউসিসিএ লিমিটেডভুক্ত ১৯৮টি সমিতি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ি সকল সমিতিকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে সাধারন সভা অনুষ্ঠানে নির্বাচনী সিদ্বান্ত নিতে হবে। কিন্তু তা না করে পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসান গত ২৫ জানুয়ারি সাধারন সভা দেখিয়ে রেজুলেশন খাতায় নামে বেনামে স্বাক্ষর করে সাধারন সভা দেখিয়ে ওই সভায় উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল বাশারকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি করে নির্বাচন পরিচালনায় একটি পকেট কমিটি গঠন করে। দুই কর্মকর্তা যোগ সাজসে ১৫ এপ্রিল নির্বাচন দেখিয়ে তাদের পছন্দের দক্ষিন পিংলাকাঠি গ্রামের কামরুল হাসান মাসুম হাওলাদারকে সভাপতিসহ বিনা প্রদিদ্বন্ধীতায় ব্যববস্থাপনা কমিটির ৭ জনকে নির্বাচিত ঘোষনা করে তা গোপন রাখে। ঘটনার এক মাস পরে বিষয়টি জানাজানি হলে প্রশাসনে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষুদ্ধ সমবায়ীরা গৌরনদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার ও গৌরনদী উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসানকে লাঞ্চিত করে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও ইউএনওকে অবহিত করে। ওই দিন উপজেলা সভা কক্ষে ইউনওর উদ্যোগে জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী সভায় বসে। সভায় গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার, গৌরনদী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমান, উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান ফরহাদ মুনসী, মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান জিনিয়া আফরোজসহ ইউপি চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্বান্ত মোতাবেক বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত সভাপতি মাসুম হাওলাদারসহ ৭ সদস্য পদত্যাগ করতে বলা হলে চাপের মুখে ব্যবস্থাপনা কমিটি পদত্যা করতে বাধ্য হন।

সভায় উপস্থিত একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে গৌরনদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার ও গৌরনদী উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসান সমিতির সদস্য ও ভোটারদের সংযুক্ত না করে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে কাগজপত্রে নির্বাচন দেখিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচিত ঘোষনা করেছে। সমিতিভূক্ত সদস্য, ভোটার, সাংসদ, ইউএনও কেউই কিছু জানেন না। বিআরডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া বলেন, আমি বর্তমান চেয়ারম্যান অথচ আমি নির্বাচন সংক্রান্ত কিছুই জানি না। দুই কর্মকর্তা অবৈধ সুবিধা নিয়ে অনিয়ম দূর্নীতি করে কাগজপত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে তাদের পছন্দের লোককে নির্বাচিত করেছে। তালিকাভূক্ত ভোটার আব্দুস সাত্তার, মাহাবুব আলমসহ ১০ জন ভোটার জানান, আমরা সাধারন সভার কোন চিঠি পাইনি। বা ভোটার হওয়া সম্পর্কে কিছুই জানি না। সাধারন সভায় উপস্থিত হিসেবে স্বাক্ষরকারী ১০টি সমিতির সভাপতিরা বলেন, আমরা সাধারন সভায় উপস্থিত ছিলাম না এবং রেজুলেশন খাতায় কোন স্বাক্ষর করি নাই।
চাপের মুখে সদ্য পদত্যাগকারী সভাপতি কামরুল হাসান মাসুম হাওলাদারে কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হনননি। এক পর্যায়ে বলেন, আমরা ব্যক্তিগত কারনে পদত্যাগ করেছি। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গৌরনদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার বলেন, সব কিছুই করেছেন পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসান আমি কিছুই জানি না। সদ্য নির্বাচিত কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন বলে শুনেছি। গৌরনদী উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হাসানের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনিয়ম দূর্নীতির সঙ্গে আমার কোন সমৃক্ততা নেই। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সমবায় কর্মকর্তা। সাধারন সভা ও নির্বাচন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন ও সাধারন সভা সম্পর্কে আমাকে কিছুই অবহিত করা হয়নি। বিক্ষুব্ধ লোকজন বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করলে তখনই জানতে পারি। পদত্যাগ করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, পদত্যাগ করা যার যার ব্যক্তিগত ব্যপার ।

সর্বশেষ