জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় অতিথি রাখা নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণকে কেন্দ্র করে মোকশেদ মিয়া নামে কেয়ারটেকারের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে মনে আঘাত পেয়ে বেড়াতে যাওয়া কেয়ারটেকারের বাবা হাজী ইমান আলী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে নেত্রকোনায় রেফার্ড করলে শুক্রবার ভোররাতে মারা যান তিনি। এমন ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায়। এদিকে কেয়ারটেকার বলছেন তাকে মারধর কারায় অনেক আহত হয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর কেয়ারটেকার মোকশেদ মিয়া জানান, প্রতিদিনের ন্যায় ডিউটিরত অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট রাতে থাকবেন বলে দুটি ব্যাগ নিয়ে আসেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আখির হোসেন।
এসময় তিনি বলেন ইউএনও পাঠিয়েছেন তাদের জন্য ভিআইপি দুটি রুম দিতে হবে। আমি তাদের নাম রেজিস্ট্রি করতে বললে ব্যাগ গুলো রেখে চলে যায় আখির। পরবর্তীতে ইউএনও আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন বলে খবর আসলে আমি ইউএনও কার্যালয়ের সামনে ব্যাডমিন্টন মাঠে উপস্থিত হই।
এ সময় সকলের সামনেই বলি যে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী স্যারের নির্দেশনা রয়েছে যে কেউ থাকুক না কেন নাম রেজিস্ট্রি করতে হবে। এই কথায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গালমন্দ করেন ও চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলায় আমি চলে আসি। পরে রাতের খাবার খাওয়ার সময় আবারো পরিচ্ছন্নতাকর্মী আখির হোসেন এসে গেটে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে আমাকে জানায়। আমি বের হয়ে আসলে আখির হোসেন বলে পিঠে ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যেতে বলেছেন ইউএনও। এসময় স্থানীয় পরিচিত বিল্লাল, ছোটনসহ বেশ কয়েককজন আমার ওপর হামলা চালিয়ে আমাকে আহত করে।
পরবর্তীতে আমি খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে এসে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করতে যাই। কিন্তু আমার উপর হামলার ঘটনা দেখে আমার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় আগে নিজে ও পিতাকে চিকিৎসার পরামর্শ দেন ডিউটি অফিসার।
পরে পিতাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে ইউএনওর সহযোগিতায় দ্রুত নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ভোর চারটায় হাসপাতালে পৌছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক উনাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবা মারা যাওয়ার ঘটনায় আমার কোন অভিযোগ নেই। তবে আমার উপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।
এ ব্যাপারে খালিয়াজুরী উপজেলার নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, এখানে কাউকে কোনদিন রেজিস্ট্রারে নাম না লিখিয়ে থাকার পারমিশন আমি দেই না। কেউ থাকেও না। করোনাকালে আমরা ডাক্তারদের জন্য শুধুমাত্র অর্ধেক ফিতে থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম। যাতে মানুষকে চিকিৎসা দেয়া যায় সেটির জন্য। এছাড়া বৃহস্পতিবার যখন ডিসি স্যারের পাঠানো দুজকে পাঠালাম তাদেরকে রুমে ঢুকতে দিয়ে রেজিস্ট্রিার করার কথা। কিন্তু সে আগেই অসৗজন্যমূলক আচরণ করে বসেছে সবার সামনে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক শুভসহ সবাই ছিলো। তাদের উপস্থিতিতেই এঘটনা ঘটেছে। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়ে লিখিত অভিযোগ রেডি করছি এমন সময় খবর পেলাম যে মোকশেদের ওপর আমাদের অফিসের কে যেনো হামলা করেছে। গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি আমাদের কেউ না। সে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আউটসোসিংয়ের একজন। আমরা তাকে খুঁজছি। সে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তবে এসবের মাঝেই আবারো খবর পেলাম মোকশেদের বাবা অসুস্থ। অমনিই আমরা তাকে সহযোগিতা করেছি। সকল ট্রিটমেন্ট দেয়াসহ নেত্রকোন পাঠানো। সে যে অভিযোগ করছে সেটি ভিত্তিহীন একেবারেই। তাছাড়া তার সম্পর্কেও সবাই জানে। সে সবার সাথেই অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তার বাবার সাথে কারোর হাতাহাতি বা কোন কিছু ঘটেনি। তিনি স্ট্রোকে মারা গেছেন বলে আমরাও জেনেছি।