৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঝালকাঠিতে নামের মিল থাকায় অন্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদে ভাতা উত্তোলন!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: ঝালকাঠির সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী নামে এক ব্যক্তি শুধুমাত্র নামের প্রথম অংশের মিল থাকায় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার ওসমানী সনদ কেড়ে নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে সুলতান হোসেন মাঝি নামের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদ চুরি করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়েছেন সকল সুযোগ-সুবিধাও। গত পনেরো বছরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীর প্রায় দশ লাখ টাকা হাতিয়েছেন প্রতারক সুলতান দুয়ারী।

কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার। ইতিমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকৃত সত্য জানতে পেরে ভাতা বন্ধসহ গেজেট বাতিল করেছে সুলতান দুয়ারীর।

জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের পিপলিতা গ্রামের মৃত সৈজদ্দীন মাঝির ছেলে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির জেনারেল ওসমানীর দেয়া সনদ পঁয়ত্রিশ বছর আগে গেজেট করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান একই ইউনিয়নের নেহালপুর গ্রামের সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী। এরপর তিনি আর সনদ ফেরত দেননি সুলতান মাঝিকে। ওই সনদ দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রথমে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর নিজের নাম ও বাবার নাম সনদে ঘষা মাজা করে সংশোধন করে গেজেট করতে পারলেও গ্রামের নাম আর সংশোধন করতে পারেননি তিনি। সনদের ঠিকানা পরিবর্তন করতে না পেরে এখন তিনি পিপলিতা গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করেন। অথচ ওই ঠিকানা প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির। জীবিত অবস্থায় প্রতারক সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর সঙ্গে শক্তি ও বুদ্ধিতে পারেননি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাঝি। অনেক ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সুলতান মাঝি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

এরই মধ্যে সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ও সনদ বাতিল এবং আর্থিকসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নোটিশ পাঠিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৪৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়।

সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর আপন চাচা বয়োজ্যেষ্ঠ আকরাম আলী দুয়ারী (৯১) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম। সুলতান দুয়ারী আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। যুদ্ধের সময় ওর বয়স ১৭-১৮ হবে। আমার ভাতিজা কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। পিপলিতার সুলতান হোসেন মাঝির সনদ নিয়ে কেমন কেমন করে যেন ও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। সুলতান মাঝি গ্রামের সহজ সরল ও অশিক্ষিত হওয়ায় আমার ভাতিজার সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি।

সুলতান মাঝির স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও প্রতারক সুলতান দুয়ারীর জন্য সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমার সন্তানরাও ভালো নেই। স্বামীর মৃত্যুর পরে অনাহারে-অর্ধাহারে আমাদের দিন কাটছে। আমি আমার স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী বলেন, আমার প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা । আমার গেজেট বাতিল হলে আমি এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করবো।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। এছাড়াও আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাঝির গেজেটের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করব।

সর্বশেষ