বর্তমান যুগে ইন্টারনেট একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে, বিশেষত যারা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের জন্য। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে কাজ করে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ হঠাৎ করে ছয় দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলে তাদের ওপর কতটা বিপর্যয় নেমে আসে তা অকল্পনীয়।
প্রথমত, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ফ্রিল্যান্সারদের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়ে। তারা তাদের কাজের আপডেট, ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ এবং নতুন প্রজেক্ট গ্রহণ করতে পারেন না। এর ফলে তাদের আয় হ্রাস পায় এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত বিভিন্ন সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে থাকেন, কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় তারা সেই সময়সীমা পূরণ করতে পারেন না, ফলে প্রজেক্ট ডেলিভারি বিলম্বিত হয় এবং ক্লায়েন্টদের অসন্তুষ্টির কারণ হয়।
দ্বিতীয়ত, ইন্টারনেট বিহীন অবস্থায় ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্টের সাথে মেইল, ভিডিও কনফারেন্স বা মেসেজিং এর মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। ইন্টারনেট না থাকলে তারা সময়মত আপডেট দিতে পারেন না, যার ফলে ক্লায়েন্টদের আস্থা কমে যায় এবং ভবিষ্যতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও, জরুরি কাজের সময়ে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ না রাখতে পারা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
তৃতীয়ত, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারার কারণে ফ্রিল্যান্সারদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। প্রজেক্ট ডেলিভারি বিলম্বিত হলে ক্লায়েন্ট অসন্তুষ্ট হন এবং রিভিউ খারাপ দেন। এর ফলে ভবিষ্যতে নতুন প্রজেক্ট পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ফ্রিল্যান্সারদের কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
চতুর্থত, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ফ্রিল্যান্সারদের পেশাগত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন স্কিল শেখা, ওয়েবিনার ও অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন না, যার ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন। ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত নতুন স্কিল আয়ত্ত করার মাধ্যমে তাদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে থাকে, কিন্তু ইন্টারনেট বিহীন অবস্থায় এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
আমি একজন ফ্রিল্যান্সার এবং সাম্প্রতিক ইন্টারনেট বন্ধের কারণে আমি আমার টিম এবং ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। সময়মত ক্লায়েন্টদের জানাতে পারিনি যে আমার ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এর ফলে আমি অনেক ক্লায়েন্ট হারিয়েছি। শুধু আমি নই, বাংলাদেশের সব ফ্রিল্যান্সারই এই সমস্যায় পড়েছে। আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের কাছে আমাদের যে বিশ্বাস এবং সম্ভাবনা ছিল তা হারিয়ে ফেলেছি।
আমি একাধিক ওয়াইফাই ব্যাকআপ, বিদ্যুৎ ব্যাকআপ এবং একাধিক কম্পিউটার ব্যবহার করে আমার ক্লায়েন্টদের কাছে একটি ভালো ইমপ্রেশন তৈরি করতাম, কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সব ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সাধারণত ফাইভার এবং আপওয়ার্কের মতো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করি। কিন্তু সমস্যাটি হল, আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি না বা এই সংকট মুহূর্তে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না।
সবচেয়ে হতাশাজনক হলো, এই ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কোনো আলোচনা করেনি বা কোনো নোটিশ দেয়নি। এর ফলে আমরা ফ্রিল্যান্সাররা সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়েছি।
সরকারের উচিত ফ্রিল্যান্সারদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা এড়ানো যায়।
লেখক:
সজিবুল ইসলাম
টপরেটেড ফিল্যান্সার- আপওয়ার্ক, লেভেল টু সেলার- ফাইবার।
