হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলীতে মহামারী করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের মধ্যে মাস্ক ছাড়াই মানুষ চলাফেরা করছে। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। পৌরশহরসহ উপজেলার গ্রাম- গঞ্জের হাট-বাজারগুলোতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে তাতে শঙ্কিত খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী অফিস, দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় তেমন একটা মাস্কের ব্যবহার নেই বললেই চলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাস্কের ব্যবহার দেখা গেলেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি সেভাবে মানা হচ্ছে না। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কার্যক্রম।
সরেজমিনে পৌর শহরের বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখাগেছে, মাছ বাজার, কাপড়, কসমেটিকস, জুতার দোকান থেকে শুরু করে কাঁচা বাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন লোকজন। নামমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বেশিরভাগ মালিকরা মাস্ক- গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিজাইটার কিছুই ব্যবহার করছেন না। মাছ বাজার ও কাঁচা বাজারের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ছোট খাটো বাজার ও চায়ের দোকানগুলোয় কেউ মাস্ক পরছেন না। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী সেবা প্রতিষ্ঠানে মাস্কের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমতলী উপজেলায় মারা গেছেন ৮ জন। উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে সাপ্তাহিক বাজারের দিন মানুষ যেভাবে বাজারগুলোতে ভীর করে তাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দূরূহ হয়ে পড়ে। আমতলী পৌর শহরসহ গ্রাম্য ওইসব হাট-বাজারের চায়ের দোকান গুলোতে একত্রে অনেক লোকজন বসে কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আড্ডা দিতে দেখা যায়। দোকানদার ও আড্ডারতদের অধিকাংশ মুখে মাস্ক ব্যবহারও করেন না।
উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, বাজার করতে এসে মানুষের ভিড়ে কেনাকাটা করতে হিমশিম খাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বাজারে মানুষের অস্বাভাবিক ভীড়ের মধ্যে অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। নেই কোন সামাজিক দূরত্ব। এমন হলে আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের এখনি সতর্ক হয়ে চলা উচিত।
উপজেলার শাখারিয়া বাজার, ব্রিকফিল্ড, মহিষকাটা, সাহেববাড়ী, গাজীপুর বন্দর, কুকুয়াহাট, হলদিয়া, অফিস বাজার, চিলা বিশ্বাসের হাট, মানিকঝুড়ি, তালুকদার বাজার, খুড়িয়াখেয়াঘাট, মুন্সিরহাট, কুকুয়া, সোনাখালী, গুলিশাখালী, গোজখালী, আড়পাঙ্গাশিয়া, চরকগাছিয়াসহ উপজেলার দেড় শতাধিক বাজারের দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল স্থানে মাস্কের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা।
সিনিয়র সাংবাদিক খান মতিয়ার রহমান বলেন, করোনায় সারাবিশ্ব বিপর্যস্ত। আমরা যদি নিজের, দেশ ও পরিবারের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে একটু সচেতন হই তাহলেই কিছুটা হলেও এই মহামারি থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবো। তিনি আরো বলেন, শহর ও গ্রামের মানুষ মুখে মাস্ক পড়ছেন না ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না তাতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কার্যক্রম
বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসাঃ নিশাত তামান্না মুঠোফোনে বলেন, জনসাধারনকে আমরা মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছি। সচেতনতার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের কাজও অব্যাহত আছে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ূন শাহিন খান বলেন, করোনায় আগামী দিনে কি পরিস্থিতি হবে তা আমরা কেউ বলতে পারি না। তবে আশঙ্কার জায়গা থেকে যদি বলি তাহলে হাট-বাজারগুলোতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে সেটা শঙ্কার বিষয়। আমরা সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে জেলা প্রশাসন ও এর অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠানে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ চালু করা হয়েছে। কোন ব্যক্তিকে সরকারি সেবা নিতে হলে তাকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।