বরিশাল বানী ডেস্ক : ভোলার চরফ্যাশনে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়ে উপবৃত্তির টাকা খুইয়েছেন। প্রতারক চক্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা মোবাইল ব্যাংকি বিকাশের মাধ্যমে। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা কোভিট -১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময় সরকারের বিশেষ সহযোগিতার টাকা হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন অবিভাবক ও অনেক শিক্ষার্থী।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের হত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ শিক্ষা সহায়ক ট্রাস্ট হার্মনাইজর্ড স্টাইফেন প্রোগ্রাম (,এইচএসপি) মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পৌছানোর দায়িত্ব দেয় । শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা পৌছানোর জন্য দেশের যে কোন ব্যাংকের সাধারণ হিসাবের মাধ্যমে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশ ও শিওর ক্যাশের মাধ্যমে এ টাকা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা আসে। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ সহজলভ্য হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশে হিসাব খোলে। কিন্তু বিধি বাম, হীতে বিপরীত হয়। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী সব টাকা খুইয়েছেন।
শুধু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিকাশের প্রতারণার শিকার হননি, সাধারণ মানুষও নামধারী বিকাশ কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হয়ে স্বর্বস্ব খোয়াচ্ছেন।
শশিভূষণ বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের এক শিক্ষর্থী জানান, তার মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা আসার সাথে সাথে বিকাশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে উক্ত শিক্ষার্থীর কাছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট আপডেট করার কথা বলে পিন নাম্বার জানতে চায়। পিন নাম্বার বলার সাপথে সাথে তার টাকা উধাও হয়ে যায়।
আবু তালহা গালেব নামে বিকাশের একজন সাধারণ গ্রাহক বলেন, তার মামা গত কিছু দিন পূর্বে বিকাশ একাউন্টে দশ হাজার টাকা পাঠায় । সে আরো বলে তার কাছে কেউ কিছু জানতে চায়নি , কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর দেখেন তার বিকাশের একাউন্টে কোন টাকা নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এরপর আমি বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে বিষয় জানালে তারা দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলে। এরপর তিনি ক্ষোভে সাথে সাথে তার বিকাশ একাউন্ট ডিজেবল করে দেন।
খালেদা আক্তার নামে একজন বিকাশের প্রাক্তন এজেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, বিকাশ কর্তৃপক্ষ মানুষের টাকার কোন নিরাপত্তা দিতে পারেন না।এমনকি অভিযোগ করলেও তারা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গড়িমসি করে । ফলে মানুষ হয়রানির ব্যাপক শিকার হয়। বিকাশ প্রতারকদের কবলে সাধারণ মানুষ অনেক টাকা খুইয়েছেন। তিনি আরো বলেন,অনেক মানুষের কান্না খুব কাছ থেকে দেখেছি। ফলে মনের ক্ষোভে বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি।
এদিক চেয়ারম্যান বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাএ/ ছাএীরা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: রাশেদুল ইসলাম ভূইয়ার পরামর্শে চেয়ারম্যান বাজার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আউটলেটে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে খুলে সকল শিক্ষার্থী ঝামেলা ছাড়াই উপবৃত্তির পুরো টাকা পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছেন।
চেয়ারম্যান বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয় চন্দ্রদাস সাংবাদিককে বলেন, আমার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান বাজার আউটলেটের একাউন্টে ১২ শত টাকা এসেছে, আমি পুরো টাকাই কোন খরচ ছাড়াই তুলতে পেরেছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ধন্যবাদ জানান, ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে বলায়।
আঞ্জুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিজুল ইসলাম জানান,বিকাশের প্রতারণার কারণে এবছর তিনি আর শিক্ষার্থীদের বিকাশের একাউন্ট না খোলে আঞ্জুরহাটে এজেন্ট ব্যাংক আউটলেট স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার পরামর্শ দেন। এবং তিনি নিজেই সহযোগিতা করে একাউন্ট খুলে দেন। তিনি আরো বলেন , ব্যাংকে একাউন্ট করা নিরাপদ ,যে কোন টাকা খোয়া যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফুল আলম সোয়েব বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ । অথচ তাদের জনসাধারণের টাকার নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। যা সত্যি দু:খজনক। মানুষের টাকা চলে যায় হ্যাকারদের পকেটে। তিনি বিকাশ কর্তৃপক্ষকে মানুষের টাকার নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রতি অনরোধ জানান।
জনসাধারণের বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকার নিরাপত্তার বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে চরফ্যাশন অঞ্চলের বিকাশের টেরেটরি ম্যানেজার মো: কামরুল হাসান কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি, তিনি উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।