খাজা আহমেদ:
এ পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হলো বৃক্ষ। বৃক্ষের ছায়াতলেই গড়ে উঠেছিল মানবসভ্যতা। পৃথিবীর শুরুতে মানুষ বৃক্ষের নিচেই গড়ে তুলেছে জীবন যৌবনের নানাবিধ আয়োজন। তাই বৃক্ষ ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।বৃক্ষের অপর নাম জীবন। মানুষ ও সমগ্র প্রাণিকূলকে অক্সিজেন দিয়ে বৃক্ষ আপন মমতায় বাঁচিয়ে রাখে। বৃক্ষ মানুষের শান্তি ও মঙ্গলের প্রতীক।কোরআনে এ ব্যাপারে বর্ণিত- ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে এবং তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে উদগ্রত করেছি নয়নাভিরাম নয়নপ্রীতিকর সব ধরনের উদ্ভিদ। আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং এর দ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি এবং সমুন্নত খেজুরগাছ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ’ (সূরা: কাফ, আয়াত-৭, ১১)।
নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর যন্ত্র-প্রযুক্তির মোহে অযাচিতভাবে বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বন। ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাড়ছে উষ্ণায়ন আর মানবসভ্যতা পড়ছে হুমকির মুখে। দেশের পরিবেশ ও ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের মতো সামাজিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। শুধু জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান বা বৃক্ষমেলার সময় নয়, নিজ নিজ উদ্যোগে প্রত্যেক সচেতন মানুষকে সময়-সুযোগ বুঝে বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসতে হবে।প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তেও তোমাদের কারও হাতে একটি চারা গাছ থাকে, তাহলে সে যেন সেই বিপদসংকুল মুহূর্তেও তা রোপণ করে দেয়’।
পরিবেশের দূষণ ও বিপর্যয়সহ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর একটি।ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়ে তুলতে হলে বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে এই কথায় আজ পর্যন্ত যদি আমরা গুরুত্ব দিতে ব্যার্থ হয় তাহলে আমাদের আগামীর বাস্তবতা কি হবে তা অবশ্যই কল্পনাতিত।একটি দেশের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। এই ব্যাপারে আজ থেকেই আমাদের সজাগ দৃষ্টি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মোট বনভূমির পরিমাণ প্রায় আঠারো শতাংশ।যার একটা বড় অংশ রয়েছে আমাদের বৃহত্তর সুন্দরবন ঘিরে। সুন্দরবন বাদ দিলে বন বলতে যা অবশিষ্ট থাকে তা খুবই নগণ্য।যেখানে বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভাবনা।আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে,মানুষ না থাকলে বৃক্ষের কোনো অসুবিধা হবে না, কিন্তু বৃক্ষরাজি না থাকলে মানবজাতির অস্তিত্বই বিলীন হয়ে পড়ে, টিকে রাখা যাবে না।
আজকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ এর কথা অনেক শোনা যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে কি প্রান্তিক লেবেলে পৌছানো সম্ভব?না ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমাদের আবাল-বৃদ্ধ কিংবা বনিতা সকলকে সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে তা ভাববার বিষয়। আপাতত আমরা যদি এটা ভাবি যে আমাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষ প্রতিবছরে নতুন নতুন ভাবে যদি একটি করে বৃক্ষরোপণ করি তাহলে আমাদের আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। আনুষ্ঠানিক ভাবে রোপন করা অনেক বৃক্ষোয় তাঁদের প্রচারের আলোয় আসে বটে, কিন্তু তাঁদের লাগানো বৃক্ষ পরবর্তী ঋতুর আলো দেখতে পায় না।এটা আজ চুড়ান্ত অলিখিত সত্য বটে।
নিঃসন্দেহে বৃক্ষরোপন একটি মহত্য প্রচেষ্টা ও সদকায়ে জারিয়া।এটা অনেক বেশি প্রচার হওয়া নিতান্তই দরকার। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র সুরক্ষায় এবং অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। মানুষের জীবনধারণের জন্য খাদ্যসহ যে সব মৌলিক চাহিদা রয়েছে বৃক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সবগুলো পূরণ করে থাকে।চলছে বর্ষাকাল। বৃক্ষচারা রোপণের উপযুক্ত সময়। আমরা যদি সবাই মিলে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশী বেশী সম্ভব বৃক্ষচারা রোপণ করি আর তা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বড় করে তুলি এটা হবে আমাদের বর্ষায় পরিবেশ কে দেওয়া অন্যতম কিছু।
লেখকঃ শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।