দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের কুয়াকাটা-লেবুখালী-ঢাকা মহাসড়কের পায়রা সেতুতে মাত্রাতিরিক্ত টোল নির্ধারণে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে এই সেতুকে ঘিরে। সেতুটি এখন শতভাগ দৃশ্যমান। যানবাহনের মালিক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে পায়রা সেতু পারাপারে অতিরিক্ত টোল নির্ধারণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সরবত্র বিতর্কের ঝড় বইছে। এদিকে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পায়রা সেতুর টোল নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে পটুয়াখালী, দুমকি, বাউফল, কুয়াকাটার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ আরও সহজতর হবে। আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই সেতুটি খুলে দেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত শনিবার সেতু সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পায়রা সেতু পরিদর্শনের মাধ্যমেও সেটি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। জানা গেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ভিডিও কনফারেনসের মাধ্যমে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শতভাগ স¤পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম।
গত ১৮ মার্চ সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের (টোল অধিশাখা) উপসচিব ফাহমিদা হক খান স্বাক্ষরিত এক গেজেটে সেতুটির টোল নির্ধারণ করা হয়। এতে পায়রা সেতুতে ট্রেইলার ৯৪০ টাকা, হেভি ট্রাক ৭৫০, মিডিয়াম ট্রাক ৩৭৫, বড় বাস ৩৪০, মিনি ট্রাক ২৮০, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান ২২৫, মিনিবাস-কোস্টার ১৯০, মাইক্রোবাস ১৫০, ফোর হুইলচালিত যানবাহন ১৫০, সেডান কার ৯৫, ৩-৪ চাকার যান ৪০, মোটরসাইকেল ২০ এবং রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি ১০ টাকা হারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।উল্লিখিত টোলের হার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।আর.আই.এম অহিদুজ্জামান নামের এক কলেজ শিক্ষক তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, লেবুখালী সেতু অবশ্যই সরকারের বড় অর্জন। কিন্তু এর টোল নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। সব যানবাহনেই টোল বেশি মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই এটা জনগণের পকেট থেকে যাবে। কারন পরিবহণ ওয়ালারা ভাড়াবৃদ্ধি করে দিবে। আর মোটরসাইকেল ফেরীতে পাড় হতাম ৫ পাঁচ টাকায়, সেতুতে ২০ টাকা। এটা জুলুম। আসুন আমরা লেবুখালী টোল পুন:নির্ধারণের দাবী জানাই। আমান খান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, সবকিছু যেমন তেমন, কিন্তু বাইকের টোল ২০ টাকা। রাজিবুল রাজ রন্টি তার ফেসবুকে লিখেছেন, পায়রা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। আমি এটিকে পুরোপুরি অযৌক্তিক মনে করি। সব মহলের উচিত এটা নিয়ে সরব হওয়া। এটি পুনরবিবেচনা করার অনুরোধ করছি। মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী লিখেছেন, পটুয়াখালী ব্রীজ টোল ৫ টাকা দবদবিয়া ব্রিজ ২ টা টোল ১০ টাকা অথচ লেবুখালী ব্রীজ পাড় হতে মটরবাইক টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। মো. সোহেল রানা লিখেছেন, পটুয়াখালী ব্রীজ টোল ৫ টাকা দবদবিয়া ব্রিজ ২ টা টোল ১০ টাকা অথচ লেবুখালী ব্রীজ পাড় হতে মটরবাইক টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা।
তারেক মল্লিক নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ফেরিতে দিতাম ৫ টাকা, ব্রিজে দিতে হবে ২০ টাকা। আমি আবার ফেরি চাই, নয়তো টোল ১০ টাকা করতে হবে। না হয় এটা নিয়ে অনেক কিছু হবে, বলে রাখলাম। আমাদের দাবি একটিই— মোটরবাইকের টোল ১০ টাকার মধ্যে চাই।
এদিকে লেবুখালী ফেরিঘাট পারাপারে মোটরসাইকেল পাঁচ টাকা, প্রাইভেটকার ৪০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস ১০০ টাকা, বড় ট্রাক ৩০০ টাকা আদায় করা হতো; কিন্তু ফেরির তুলনায় সেতুর টোল দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। প্রাইভেটকার চালক মো. রাসেল মিয়া জানান, ফেরিতে আমরা ৪০ টাকা দিয়ে পারাপার হতাম। আর এখন ব্রিজে ৯৫ টাকা দিতে হবে, যা একেবারে অযৌক্তিক। বাস চালক মোমেন জানান, যেখানে ১০০ টাকা নিত ফেরি, এখন ব্রিজে তার দ্বিগুণ টোল দিতে হবে। মোটরসাইকেল চালক মো. আরিফ হোসেন জানান, ফেরিতে সবসময় ৫ টাকা দিতাম, এখন ব্রিজে ২০ টাকা দিতে হবে, আগেই ভালো ছিলাম। কারণ দিন শেষে যা ইনকাম হতো তার অর্ধেক টোল দিতে হবে। পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. রিয়াজ মৃধা জানান, লেবুখালী পায়রা সেতুর টোল ফেরির তুলনায় তিনগুণ ধরা হয়েছে। এভাবে হলে কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা অতিরিক্ত টোলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করব।
সড়ক ও জনপথ বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, ফেরি ও সেতুর টোলের বিষয়টি স¤পূর্ণ আলাদা। সড়ক পরিবহন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে টোল নির্ধারিত হয়ে থাকে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। সবাই পৃথকভাবে তাদের ফেসবুক পোস্টে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এটা অযৌক্তিক বলেও এরা সবাই দাবি করেন। প্রতিবাদকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে না নিলে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করবো।
#
