পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ পিরোজপুরে অতি দরিদ্র দলিত জনগোষ্ঠীর অবস্থান এবং আমাদের করণীয় শীর্ষক জেলা পর্যায়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় পিরোজপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থী সংসদ মিলনায়তনে উক্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ দলিত পঞ্চায়েত ফোরাম পিরোজপুর জেলা শাখা, রয়েল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পিরোজপুর জেলা এবং শারি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ দলিত পঞ্চায়েত ফোরাম পিরোজপুর জেলা সভাপতি অশোক দাস মুন্না। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে রামপ্রসাদ দাস, উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, পিরোজপুর, এম এ রাব্বানী ফিরোজ, সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পিরোজপুর, শফিউল হক মিঠু, সাবেক সভাপতি, পিরোজপুর প্রেসক্লাব, খালেদা আক্তার হেনা, সাধারণ সম্পাদক, সুনাম, পিরোজপুর জেলা, আব্দুস সালাম বাতেন, প্যানেল মেয়র, পিরোজপুর পৌরসভা।
প্রধান অতিথি পিরোজপুর সদর নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ করোনাকালীন কর্ম হারানো দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের বিষয়ে বলেন, ”যে সকল প্রবাসী কোভিড ১৯ মাহামারীর কারণে কর্ম হারিয়েছেন তাদেরকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহ্বায়ক করে অত্যন্ত স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার প্রস্তাব হচ্ছে দলিত সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিতে এভাবে একটি ঋণের কাঠামো তৈরি করা। যাতে করে তাদেরকে কর্মে ফিরিয়ে আনা যায়। অন্যদিকে দলিত জনগোষ্ঠীকে তাদের ঐতিহ্যগত পেশা অর্থাৎ ক্লিনিং পেশা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পৃথিবী উন্নত হচ্ছে, ক্লিনিং সহ সুইপিং জাতীয় যে কাজগুলো আছে সেগুলো স্পেশালাইজ মেকানাইজড পদ্ধতিতে করা যায়”
তিনি আরও বলেন ”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিব বর্ষে ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশে কোন গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না এবং আপনারা কেউ কেউ নিশ্চয় জেনেছেন জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করার জন্য কক্সবাজারে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়েছে, সেখানে বহুতল অনেকগুলো ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে মাত্র এক হাজার এক টাকার বিনিময়ে জলবায়ুু উদ্বাস্তু বহু পরিবারকে সরকার একটি করে ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। এই করোনাকালীন সময়ে আমি নিজেও মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ক সাথে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে এই দলিত জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছিয়ে দিয়েছিলাম। তখন আমরা দেখেছি তারা অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং স্যাতসেতে পরিবেশে থাকেন। আমি প্রস্তাব করতে চাই শারির মাধ্যমে, বিশেষ করে রঞ্জন বকসী নুপুর মাধ্যমে, তারা যখন প্রস্তাবনা দেবেন, তখন তারা এ বিষয়টিকে গুরত্বে দেবেন যাতে সরকারের গৃহহীন মানুষদের কে বহুতল ভবন তৈরির কর্মসূচির আওতায়দলিত জনগোষ্ঠীর সুন্দর জীবন যাপনের জন্য এইরকম বহুতল ভবন করে দেওয়া হোক।
অন্যদিকে আমি আরো প্রস্তাব করতে চাই যে, যারা সুইপিং বা ক্লিনিং পেশায় জড়িত আছেন তাদেরকে আধুনিক সরঞ্জামাদির ব্যবহারের আওতায় আনতে হবে। একজন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে কেন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে এই কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। এজাতীয় নেশাদ্রব্য পানের ফলে তাদের ব্রেন সহ বিভিন্ন প্রকার শারীরিক কর্মক্ষমতা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। সে কারণে তাদেরকে এমন কিছু মেকানিজম দেওয়া হোক, আধুনিক সরঞ্জাম দেয়া হোক যেটার মাধ্যমে সুইপিং কাজ করতে গিয়ে তাদের মানসিক বা শারীরিক কোন ক্ষতি হবে না। উন্নত বিশ্বের মতো এরকম কিছু আধুনিক সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা হলে তাদের জীবন মানের উন্নয়নঘটবে বলে আমি মনে করি। এ জাতীয় কিছু সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমে দলিতসহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মূলধারায় উন্নীত করা সম্ভব।
