পিরোজপুর প্রতিনিধি ::: পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে চারবারের এমপি জাতীয় পার্টির নেতা ডা. রুস্তম আলী ফরাজীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হচ্ছে। নেতাকর্মীরা বলেছেন, জাপার এমপি হলেও দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন তিনি। এ কারণে তাঁকে লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ডা. রুস্তম জানান, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন।
বর্তমান সংসদে বরিশাল বিভাগে জাপার এমপি তিনজন। এর মধ্যে ডা. রুস্তম একমাত্র প্রার্থী, যিনি দ্বিমুখী এবং ত্রিমুখী লড়াইয়েও জয়ী হয়েছেন। বারবার দলবদল করলেও তাঁর জয়ের রথ থামানো যায়নি। এলাকায় একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবেই বিবেচিত হন তিনি।
এবার এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাশরিকুল আজম রবি। নবাগত প্রার্থী দেওয়ায় জাপা আসনটি হারাবে বলে মনে করেছেন স্থানীয় নেতারা।
পিরোজপুর জেলা জাপা সভাপতি বশির আহমেদ জানান, ব্যবসায়ী রবি এক বছর আগে জাপায় যোগ দিয়ে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হন। এই প্রথম তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন।
অন্যদিকে ডা. রুস্তম ১৯৯৬ সালে জাপা, ২০০১ সালে বিএনপি, ২০১৪ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে এবং ২০১৮ সালে মহাজোটের সমর্থনে জাপার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।
এ রকম একজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে জাপা কেন মনোনয়ন দিল না, জানতে চাইলে দলটির নেতারা বলেন, তাদের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিতেন না। এমনকি দলের সংসদীয় সভাতেও যেতেন না। উপজেলায় ‘উন্নয়ন কমিটি’ নামে কর্মসূচি করতেন। এতে দলের নেতাকর্মীকে রাখা হতো না। অনুষ্ঠানের ব্যানারে জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদ ও বর্তমান চেয়ারম্যানের জি এম কাদেরের ছবি থাকত না। এমনকি তাদের নামও উচ্চারণ করতেন না এমপি। কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কারণে আগে থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এর পরও মঠবাড়িয়া উপজেলা জাপা তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছেন স্থানীয় নেতারা।
মঠবাড়িয়া উপজেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে তাঁর বাম পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৯ মাস। দলের এমপি রুস্তম আলী মাত্র একদিন তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন। এক টাকাও আর্থিক সহায়তা করেননি।
জেলা সভাপতি বশির বলেন, এমপিকে ১০ বার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে তাঁর পিএস ফোন রিসিভ করেন।
তিনি আরও বলেন, দল মনোনীত প্রার্থী রবিকে দিয়ে জয় তো দূরের কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
তবে ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সময়ের অভাবে সব সময় কেন্দ্রের সব সভায় অংশ নিতে পারিনি।
স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার প্রয়োজন, তাই বলছেন। এলাকায় অবস্থান করে আবারও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।