বরগুনা প্রতিনিধি ::: মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন বাজারের কামারপাড়াগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কামারপাড়াগুলো এখন টুং টাং শব্দে মুখরিত।
গবাদিপশু জবাই করা থেকে শুরু করে মাংস প্রক্রিয়ার জন্য এখনও কামারের তৈরি ধারালো দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি সব চেয়ে জনপ্রিয়। তাই ভোরের আলো ফোটার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করে যাচ্ছেন কামাররা। হাপরের বাতাসে কামারশালার ছোট্ট চুল্লিতে গনগন করে উঠছে কয়লার আগুন। আর সেই আগুনে পোড়া লাল লোহা পাশেই হাতুড়ি পেটা করে ছুরি-বঁটি তৈরি করছেন কামারশিল্পীরা।
সরেজমিন বরগুনা পৌর এলাকার পৌর সুপার মার্কেটের পেছনে ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন কামার পট্টিতে। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। আগে যে সমস্ত দোকানে দুজন করে শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেই দোকানে ৫-৬ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন।
কামারশিল্পী গৌরঙ্গ কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কাঁচামাল কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য দ্বিগুণ বেড়েছে। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৪০০-৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন আমাদের ৮০০-৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ সময় হাতে টাকা-পয়সা না থাকলে ঋণ করে হলেও দা, বটি, ছুরি এসব তৈরি করার জন্য লোহা ও ইস্পাত কিনি আমরা। তাই আমরা চাপাতি, ছুরি ও দায়ের দাম একটু বেশি নিচ্ছি।
বিভিন্ন সাইজের দা সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা, বটি ২০০-৫০০ টাকা, হাসুয়া ২৫০-৩৫০ টাকা, ছুরি ১২০-৪৫০ টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। লোহার মান ভেদে এর দাম উঠানামা করে।
আমতলী পৌর শহরের গৌরাঙ্গ ও তালুকদার বাজারের কালীদাস কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, লোহার পাশাপাশি স্প্রিং বা স্টিলের ছুরি চাকুও লোকজনকে আকৃষ্ট করছে।
মেরামত ও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে তারা জানান, বর্তমানে কয়লা ও রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই আমরা দাম একটু নিচ্ছি।
ক্রেতা হামীম ও রাখি বেগম বলেন, কামাররা দেশীয় প্রযুক্তিতে লোহা আগুনে গরম করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা ও ছুরি তৈরি করেন। নিজেদের সুবিধা মতো ওইসব জিনিস তৈরি করা যায়। গত বছরের তুলনায় এবার দাম অনেক বেড়েছে। তবে সেগুলো খুব টেকসই হয়।
কর্মকার সমিতির সভাপতি পরিতোষ কর্মকার বলেন, কাজের ব্যস্ততায় নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। ঈদের আগ পর্যন্ত কাজ চলবে। বর্তমানে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটায় গ্রাম বাংলার সেই কামারশিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন আর ভালো মুনাফা না থাকায় দিনে দিনে এই শিল্পকর্ম ছেড়ে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাই।