নিজস্ব প্রতিবেদক,
বর্ষার আগের তিন মাসে ঝড়-বৃষ্টি হয়ে থাকলেও চলতি বছরের চিত্র ভিন্ন রকমের। বাতাসেও জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম। সব মিলিয়ে দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির রেকর্ড স্পর্শ করতে পারে বলে পূর্ভাবাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া, সেক্ষেত্রে কালবৈশাখী ঝড়ও হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) বিকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাওসার পারভীন জানান, আজ বিকালে তিনটা পর্যন্ত যশোর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া চুয়াডাঙার ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং রাজধানী ঢাকাতে রেকর্ড হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসয়াস। গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি। যা তীব্র তাপপ্রবাহ। রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও কুষ্টিয়া জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া ঢাকা বিভাগের সব জায়গা, বরিশাল বিভাগের সব জায়গা এবং খুলনা বিভাগের কয়েকটা অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ১৯৪১ সাল থেকে তাপমাত্রার ধারণ করছে। সে অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পর ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মাপা হয় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া পাঁচ দশকের রেকর্ড ভেঙে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০২১ সালে তাপমাত্রা পূর্বের রেকর্ড স্পর্শ করার সম্ভাবনা রয়েছে কি না ঢাকা টাইমসের এমন এক প্রশ্নের জবাবে কাওসার পারভীন বলেন, ‘এর কাছাকাছি যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক টানা এত দিন বৃষ্টিপাত কম থাকায় এবং এক নাগারে এত দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে রেকর্ডের কাছাকাছি তাপমাত্রা বাড়তে পারে। সিলেট এবং চট্টগ্রামের কয়েক জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে সেটার পরিমাণও কম। কিন্তু এখনকার যে তাপপ্রবাহ গত কয়েক বছরের মধ্যে অত্যাধিক বেশি।‘
কৃষিতে তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ধান গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছে।‘
এদিকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কয়েক জায়গায় আজ সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাওসার পারভীন। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কাওসার পারভীন বলেন, ‘মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস প্রি-মুসনুন। এসময় অল্প বৃষ্টি হলেও ঝড় বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। ঢাকাতে তেমন বৃষ্টিপাত নেই। গত তিন চার বছরে এমনটা হয়নি।‘
দেশের বাতাসে জলীয় পাষ্পের পরিমাণ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে বলেও জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।’