নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের হিজলা উপজেলার দক্ষিণ বাউশিয়া গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় কোস্ট গার্ডের ট্রলারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় অভিযানে থাকা ট্যাগ কর্মকর্তা ও ট্রলারের মাঝি আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর কোস্ট গার্ডের সদস্যরা গ্রামের ভেতর ঢুকে নারী-পুরুষদের লাঠিপেটা করেছেন বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে। লাঠিপেটায় ৯ মাসের অন্তসত্ত্বা নারী ফারজানা বেগম (২০) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
এ ব্যাপারে কোস্ট গার্ড সদস্যরা গ্রামবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ট্রলারে হামলাকারীরা নিজেদের রক্ষা করতে লাঠিপেটার মিথ্যা কথা প্রচার করছেন।
হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে দুপুরে কোস্ট গার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তরের দুটি আলাদা ট্রলার নিয়ে টহলে বের হয়।
দক্ষিণ বাউশিয়া গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে পৌঁছালে কোস্ট গার্ড সদস্যদের বহনকারী ট্রলারে হামলা চালানো হয়। নদীর তীর থেকে আকস্মিক ইটপাটকেল ও বাঁশের খন্ড নিক্ষেপ করেন অসাধু জেলেরা। এতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অভিযানের ট্যাগ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম ও ট্রলার মাঝি মো. সোলায়মান আহত হন।
তিনি আরও বলেন, হামলার পর কোস্ট গার্ডের সদস্যরা আহত দুজনের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। একটি মহল বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে কোস্ট গার্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে লাঠিপেটার অভিযোগ করছেন।
তবে দক্ষিণ বাউশিয়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, নদীর তীরে জেলেদের সঙ্গে ঘটনার জের ধরে কোস্ট গার্ড সদস্যরা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে নারী-পুরুষদের বেধড়ক লাঠিপেটা করেছেন। এতে অন্তসত্ত্বা নারী ফারজানা বেগম, বাচ্চু ঘরামি, মাহবুব বাঘাসহ অনেকে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন।
অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ ফারজানা বেগম জানান, স্বামীর বাড়ি মুলাদী থেকে তিনি আজ বিকেলে হিজলার বাউশিয়া গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। সন্ধ্যার দিকে তার বাবা জলিল ব্যাপারীকে কয়েকজন কোস্ট গার্ড সদস্য খুঁজতে থাকেন।
এ সময় কোস্ট গার্ডের সদস্যরা ঘরের মধ্যে ঢুকে লাঠি দিয়ে তাকে একাধিক আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হিজলার বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বর) ও বাউশিয়া গ্রােেমর বাসিন্দা ঝন্টু হাওলাদার বলেন, ঘটনার সময় আমি হিজলা বন্দরে ছিলেন।
ঘটনার পর কোস্ট গার্ডের সদস্যরা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে আমাকে ঘটনাস্থলে ডেকে নেন। তারা চলে গেলে গ্রামের লোকজন অভিযোগ করে কোস্ট গার্ড বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নারী-পুরুষদের মারধর করেছেন।
তবে লাঠিপেটা করার অভিযোগ অস্বীকার করে হিজলার কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হামিদুল হক বলেন, কোস্ট গার্ডের ট্রলারটি বাউশিয়া ঘাটে ভেড়ার সময় তীর থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও বাঁশের খন্ড নিক্ষেপ শুরু হয়।
এ সময় সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে ট্রলারের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেন। ট্রলারে থাকা মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে অংশ নেয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম ও ট্রলার মাঝি মো. সোলায়মান আহত হয়েছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনার বাউশিয়া পয়েন্টে অসাধু জেলেরা ইলিশ শিকার করছিল। আটক ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে তারা এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য রটাচ্ছে।
কোস্টগার্ড সদস্যরা কারও বাড়ির মধ্যে ঢুকেনি। লাঠিপেটাও করেনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরাও গিয়েছিলেন।
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস বলেন, কোস্টা গার্ডের ট্রলারে হামলার খবর শুনেছি। তবে লাঠিপেটার কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ওই গ্রামের কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগও করেনি।