নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসের’ প্রভাব কেটে গেলেও পূর্ণিমার কারণে নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার এখনো অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিকেল ও শুক্রবার (২৮ মে) ভোর রাতের জোয়ারে বরিশাল শহরের নিম্নাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী বহু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সবশেষ হিসেব অনুযায়ী, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৫ সেন্টিমিটার, আবুপুরের নয়াভাঙ্গুলী নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৩৮ সেন্টিমিটার, টঙ্গীবাড়ির তেঁতুলিয়ার পানি ডেঞ্জার লেভেলের ১২৬ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ২২ সেন্টিমিটার, ভোলার খেয়াঘাট সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এর আগে বিকেল ৩টার দিকে বরিশালের হিজলার ধর্মগঞ্জ, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী, বরগুনার বামনার বিষখালী, ভোলার দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও পূর্ণিমার কারণে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদী তীরের ১২টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু গ্রাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও পূর্ণিমার কারণে সাগরে পানির চাপ বাড়ায় বিভাগের বরগুনা সদরে বেড়িবাঁধের ৪টি পয়েন্ট, বামনায় ২টি পয়েন্ট, বেতাগীতে ১টি পয়েন্ট, পাথরঘাটায় ১টি পয়েন্ট ও আমতলীতে ১টি পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নিজামপুরে ১টি পয়েন্ট ও ধুলাসারে ১টি পয়েন্ট এবং ভোলার মনপুরায় ১টি পয়েন্টসহ মোট ১২টি পয়েন্টে প্রাথমিকভাবে এক থেকে দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অপরদিকে জোয়ারের পানিতে প্রায় ১ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন।
বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, পানি বাড়ায় বিভাগে প্রায় ১ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা সড়কও। এছাড়া কিছু গাছপালা, পানের বরজ ও শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।
এছাড়া ‘ইয়াস’-এর কারণে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পুকুর ও ঘের ডুবে ৬৪ কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আনিছুর রহমান জানান, শুধুমাত্র পটুয়াখালী জেলায় ৫৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
যদিও দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কৃষকরা উদ্বিগ্ন ছিল তাই ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে বৃষ্টিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন কৃষকরা।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাওফিকুল আলম জানান, পানির কারণে আউশ ধান চাষে কৃষক উপকৃত হবে।