১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
নাজিরপুরে পাশাপাশি খোঁড়া হচ্ছে একই পরিবারের সেই ৪ জনের কবর ভোলায় পূজা মন্ডপের গেট ভাঙচুরের সময় হিন্দু যুবক আটক রায়পুরায় পূজামণ্ডপের প্যান্ডেল ভাঙচুর নিয়ে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন কলাপাড়ায় সরকারী খাল দখলমুক্ত করতে দু-পক্ষের হামলা, আহত-৫ ঝালকাঠিতে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক বরগুনায় ধ*র্ষ*ণ প্রতিরোধক জুতা আবিষ্কার করলো স্কুলছাত্র দুমকিতে ছাত্র ব*লাৎকা*রের অভিযোগে প্রাইভেট শিক্ষক আটক বরিশালে পূজা মণ্ডপ পাহারা দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা স্কুল-কলেজের শিক্ষার মতো মাদ্রাসা শিক্ষাকেও কর্মমুখী করতে হবে: স্বপন মুলাদীতে পুকুরে গোসলে নেমে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

বরিশালে পরিবহন থেকে মাছ ছিনতাই মামলার আসামী নিরাপরাধ যুবক(!)

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে পরিবহন থেকে ৩ হাজার ১শ কেজি মাছ ছিনতাইয়ের ঘটনায় নাদিম (৩৬) নামের এক যুবককে আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার এসআই শহীদুল ইসলাম। নাদিমের দাবি- সে ওই মাছ ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িত নন। তাকে অহেতুক হয়রানি করার জন্য অভিযোগপত্রে ১৩ নম্বর আসামী করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী নাদিম নগরীর ১নং ওয়ার্ডস্থ পাসপোর্ট গলির মৃত আবু তালেব সরদারের ছেলে।

অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে – মাছ ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদি ইমন প্যাদা পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা থেকে ৯ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ১শ কেজি ইলিশ মাছ ক্রয় করেন। মৎস্য ব্যবসায়ী ইমন চলতি বছরের গত ২৫ জানুয়ারি ইলিশ মাছগুলো ‘ডলফিন এক্সপ্রেস’ নামের পরিবহনে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠান। ওই পরিবহনটি রাত ১১ টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানাধীন আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় আসলে ৪০/৪৫ জনের একটি দল গাড়িটি দাড় করায়। পরে পরিবহনের চালক ও সুপার ভাইজারকে ভয়ভিতি দেখিয়ে ঢাকা মেট্রো- ন-১৬-৫৪২৮ নম্বরের একটি হলুদ পিকআপে মাছগুলো উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার ডাক-চিৎকার দিলে ৩ ককসিট মাছ, একটি হিরো হাঙ্ক মোটরসাইকেল, একটি টাটা পিকআপ ফেলে পালিয়ে যায় অজ্ঞাতরা।

এরপর বিষয়টি কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করলে তারা তাৎক্ষনিক মোটরসাইকেল ও পিকআপটি জব্দ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মৎস ব্যবসায়ী ইমন প্যাদা বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। (যার জিআর নং- ৪৮/২০২৪)।

প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন এসআই রিয়াজুল ইসলাম। পরে তিনি ঢাকায় ট্রেনিং-এ গেলে গেলে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় এসআই শহীদুল ইসলামকে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আসামী গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া আসামীরা আদালতে ঘটনার সাথে জড়িত সকলের নাম উল্লেখ করে জবানবন্দী দিয়েছে। পাশাপাশি আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে আসামীদের দেয়া জবানবন্দীতে কোথাও নাদিমের নাম পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজেও নাদিমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

আটক হওয়া মামলার ৫ নম্বর আসামী মোঃ নিরবের জবানবন্দীতেও নাদিমের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

নিরবরে জবানবন্দী হুবহু তুলে ধরা হলো- আমি মোঃ নিরব হাওলাদার, পিতা: মোঃ ফারুক হাওলাদার, মাতা- মৃত হাসিনা বেগম, সাং- বাসু মিয়ার গলি, সর্দার বাড়ি, থানা-কাউনিয়া, জেলা- বরিশাল। আমি আগে একটি ডায়াগনস্টিক এ কাজ করতাম। বর্তমানে বেকার, চাকরির সন্ধান করছি,বিগত ২৫/০১/২০২৪ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার আমরা এলাকার বন্ধুবান্ধব পিকনিকের আয়োজন করে আমাদের দাওয়াত দিয়েছিল।ঐদিন অনুমান রাত ৯.৩০ ঘটিকার সময় বাসা থেকে বের হয়ে সেখানে যাওয়ার পথে বন্ধু মানিককে ফোন দিই। তখন মানিক আমাকে বলে দপদপিয়া ব্রীজের পাশে জাটকা ইলিশ ধরা হয়েছে,তুই আয়।আমি তখন সেখানে যাই।আমার যেতে ৪০ মিনিটের মত সময় লাগে। সেখানে গিয়ে দেখি ইমরান, সোহেল (১), সোহেল (২), রাজিব, রিয়াজ (১), রিয়াজ (২), শহিদ, বাবু, শাওন, ফয়সাল, মানিক দাড়িয়ে আছে।সেখানে আরো কিছু সাংবাদিকও আছে। অতপর আমি দেখি প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে প্যাচানো কিছু ককসিটে জাটকা ইলিশ রাখা এবং পাশে একটি গাড়ি রাখা আছে। আমি সেগুলো দেখে পাশে এসে দাড়িয়ে থাকি।কিছুক্ষণ পর সোহাগ রথি ওরফে রকি একটি পিকআপ এনে জাটকা ইলিশ মাছগুলো পিকআপে ভরে নিয়ে যায়। এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরেরদিন শুক্রবার সন্ধ্যার পরে সোহাগ এলাকায় এসে টাকা দিয়ে গিয়েছে। এরপর কাউনিয়া ফাস্ট লেনে গিয়ে মানিকের কাছ থেকে আমি আমার ভাগের ১,৫০০/-টাকা নিয়ে আসি। তখন মানিক বলে যে, মাছগুলো ১,২০,০০০/-টাকায় বিক্রি করেছে, তাকে সোহাগ বলেছে। অন্যান্য সবাইকেই সেখান থেকে কিছু কিছু টাকা দেয়। কাউকে ৪,০০০/-কাউকে ৫,০০০/-টাকা আবার কাউকে ৯,০০০/-টাকাও দেয়। এই তার বক্তব্য। পরে পুলিশ আমাকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করে। এই আমার জবানবন্দী।

এ বিষয়ে নিরব মুঠোফোনে বলেন- নাদিম সম্পূর্ণ নিরাপরাধ ঘটনার সাথে সে জড়িত নয়, আমরা কেউ তার বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেইনি। তবে কেন নাদিমকে এ মামলায় আসামী করা হলো সে বিষয়টি আমার জানা নেই।

মামলার ১ নম্বর আসামী সোহাগ মোল্লা বলেন- নাদিম ঘটনাস্থলে ছিল না, সে ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তারপরেও সে কিভাবে মামলার আসামী হলো আমার মাথায় আসে না।

ওই মামলার ৮ নম্বর আসামী মোঃ মানিক বলেন- ওই দিনের ঘটনায় নাদিম ছিলনা, সে এসবের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাকে অহেতুক মামলার আসামী করা হয়েছে।

নাদিমের অভিযোগ- আমি মাছ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত নই। আমি ওখানে ছিলাম না। মামলাটি তদন্তকালীন সময় তার বাসায় পুলিশ গিয়ে তার নাম-পরিচয় জানতে চায়। তখন সে কিছু বুঝতে না পেরে কি কারণে তার নাম-পরিচয় খুঁজছে পুলিশ সে বিষয়ে জানতে তার চাচতো ভাই রাকিবকে থানায় পাঠায়। রাকিব থানায় গিয়ে জানতে পারে মাছ ছিনতাইয়ের মামলায় নাদিম আসামী করা হয়েছে। এ সময় মামলা থেকে নাদিমের নাম বাদ দেয়ার জন্য রাকিবের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই শহীদুল ইসলাম। রাকিব তখন জানিয়ে দেন নাদিম ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না, কোন টাকাও দিতে পারবে না।

রাকিব বলেন- আমি নাদিমের নাম-পরিচয় জানার বিষয়ে এসআই শহীদুল ইসলামের কাছে গিয়ে জানতে পারি নাদিম নাকি মাছ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ছিল। কিন্তু নাদিম ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না। তবুও নাদিমের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়ার জন্য আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই শহীদুল ইসলাম। তখন আমি তাকে বলি নাদিম সম্পূর্ণ নিরপরাধ সে কেনো এতো টাকা দিবে! এতো টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তার নাই। আপনি একটু বিবেচনা করেন ভাই নাদিম একটা নিরীহ ছেলে বিগত দিনেও তার নামে কোনো মামলা বা অভিযোগ নাই ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলতেছে। পুনঃরায় বলি- নাদিম ওই ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তিনি আমাদের কথা না শুনে নাদিমকে ওই মামলার ১৩ নম্বর আসামী করে চার্জশিট জমা দিয়েছেন।

মামলার বাদি ইমন প্যাদা বলেন- ভাই আমি গলাচিপায় ব্যবসা করি, আমি বরিশালের তেমন কাউকে চিনিনা। পুলিশ ভিডিও দেখে মামলার আসামী সনাক্ত করেছে। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, আমি কাউকে সনাক্তও করিনি।

তিনি আরও বলেন- নাদিম নামের যাকে আসামী করা হয়েছে তাকেও আমি চিনি না। যা করার পুলিশ করেছে।

এসআই রিয়াজুল ইসলাম বলেন- মামলাটি প্রথমে আমি তদন্ত করি এবং কয়েকজন আটক করি। এরপর আমি ঢাকায় ঢাকায় ট্রেনিং-এ গেলে মামলার তদন্ত করেন এসআই শহীদুল ইসলাম। তিনিই মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছেন।

এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন- আসামী দাবি করতেই পারে সে ছিল না। আমি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট গঠন করেছি। আর আমি কারো কাছে টাকা দাবি করিনি।’’

সর্বশেষ