২রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বরিশালে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে চলছে দিঘি ভরাট!

শহীদুল্লাহ সুমন :::: নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ সংলগ্ন শেরে বাংলা সড়কের আলীর দিঘি নামে পরিচিত শতবর্ষী দিঘিটি রাতের আঁধারে বেআইনীভাবে ভরাট করছে আলী চেয়ারম্যান নামের এক প্রভবশালী ব্যাক্তি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অভিযান চলমান থাকা সত্বেও ওই দিঘিটি ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে তার দাবি পরিবেশ অধিদপ্তর ও বরিশাল সির্টি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি দিঘিটি ভরাট করছেন।

পরিবেশ রক্ষায় দিঘিটি যেন ভরাট না করা হয় সে জন্য আকুতি জানিয়েছে এলাকাবাসী। এর আগে দিঘিটি বাঁচাতে এলাকাবাসী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাছে আবেদন করেছিলেন তারা। যার প্রেক্ষিতে সেখানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজে গিয়ে দিঘিটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- দুটি ট্রাকে করে বেশ কয়েকজন শ্রমিক বালু ফেলে দিঘি ভরাট করছে। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে একটি ট্রাক তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাইলে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন। এরপর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ওই ওয়ার্ডের সড়ক পরিদর্শক আশিক ইমামকে মুঠোফোনে জানালে তিনি বলেন- অফিসের অনুমতি ছাড়া আমি কোথাও যেতে পারবো না। অফিসের কর্মকর্তারা বললেই আমি ওখানে যাবো। অফিসের অনুমতি ছাড়া কোথাও যান কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে কলটি কেটে দেন।

এরপর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসিনক কর্মকর্তা স্বপন কুমারকে ফোন দিলে তিনি বলেন- বালু ভরাট হচ্ছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। জানলাম যেহেতু আমি লোক পাঠাবো। পরে আবার সড়ক পরিদর্শক আশিক ইমামকে কল করলে তিনি রিসিভ করে বলেন- কাল সকালে গিয়ে দেখবো, এখন পারবো না।

সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হাসান নামে এক যুবক। তিনি আলি চেয়ারম্যানের নাতি পরিচয় দিয়ে হাক-ডাক তুলে বলেন- গাড়ী আটকাইছে কে? কার এত বড় সাহস? এরপর ক্যামেরা দেখে বলে উঠেন ভিডিও করবেন করেন, তাতে আমার কিছুই হবেনা। আমরা দিঘি ভরাট করবোই। দিধি ভরাট কাজে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা কাল আমার নানার (আলি চেয়ারম্যানের) অফিসে আসেন আপনাদের সাথে কথা বলবো।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসিনক কর্মকর্তা স্বপন কুমার বলেন, দিঘিটি ভরাট না করতে তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। ট্রাকও আটক করা হয়েছে। তার পরেও তারা রাতের আধারে বালু ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়- প্রায় বছর খানেক আগে ওই দিঘিতে বালু ভরাট করার খবর পেয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজে গিয়ে দিঘিটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপরেও বেশ কয়েকবার ভরাট কাজ বন্ধ করা হয়েছে। অভিযানের কারনে সেখানে দিনের বেলায় দিঘি ভরাট বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে ট্রাকে বালু এনে দিঘিটি ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আলি চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে আলী চেয়ারম্যান বলেন- নিউজ করে লাভ হবে কি? তার থেকে চুপচাপ থাকো। আমার বলা আছে কাজের ওখানে কেউ গেলে তার হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে। সবাই টাকা খায়, কেউ সামনে কেউ পিছনে। আমি সবাইকে ম্যানেজ করেই দিঘি ভরাট করতেছি। কারো ক্ষমতা নাই কাজ বন্ধ করার। আগে সাদেক ছিল, এখন খোকন আইছে। এতদিন সাদেককে ম্যানেজ করে কাজ করতাম। এখন খোকনকে ম্যানেজ করেই কাজ করি।

তিনি আরও বলেন- সাদিক এবং টুটুল মেয়র আমার দিঘি থেকে বালু কেটে নিয়ে গেছে তখনতো আপনারা নিউজ করেন নি। সাদিককেতো আপনারা ভয় পান। তার বিরুদ্ধে নিউজ করতে পারেন না। এখন আসছেন আমার বিরুদ্ধে নিউজ করতে। এসব নিউজ মিউজ করা বন্ধ করেন। দিঘি ভরাট কাজ শেষ হলে আপনাদের বিষয়টা দেখবো। তখন আপনাদের জন্য কিছু করবো। এ সময় সাংবাদিকদের নগদ টাকা দিয়ে ম্যনেজের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেকের মুঠেফোনে একাধিক দিন বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে খেলার মাঠ, পুকুর, জলাধার, দিঘি, খাল, বিল, ভরাট করে উন্নয়নমূলক কোন কাজ করা যাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই আদেশ অমান্য করে ওই দিঘি ভরাটের কাজ চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সর্বশেষ