শামীম আহমেদ :: বরিশালে ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপনের জন্য বরিশাল বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তারা সমবায় সমিতি থেকে দশ হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিম্মে দুই হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদস্যরা এত টাকা দিতে অপারগতা জানালে সমবায় কর্মকর্তারা সমিতির নিবন্ধন বাতিলের হুমকি দেন। নিরুপায় সদস্যরা কেউ দশ হাজার কেউ পাচঁ হাজার আবার কেউ দুই হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে সমিতির নিবন্ধন রক্ষা করেন।
সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, ‘সমিতির সদস্যরা প্রতি মাসে লোকসান গুনছেন। করোনা মহামারীতে সঞ্চয় ও ঋন আদায় বন্ধ। এছাড়া অনেক ঋন গ্রহিতা ঋন নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। এরপরও নিবন্ধন রক্ষার জন্য সমবায় কর্মকর্তাদের দাবি করা চাঁদা দিতে হয়েছে।
বরিশালের সমবায় সমিতিগুলো প্রতি মাসে লোকসান গুনছেন। কিন্তু সমবায় কর্মকর্তারা সমিতির নিবন্ধন বাতিলের হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করেছেন। ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপনের নামে বিভিন্ন ক্যাটাগরির (শ্রেণির) সব সমিতির সদস্যসহ সমবায়ীরা বেপরোয়া চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ,
সমিতি প্রতি দশ হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিম্নে দুই হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। ওই হিসাবে সমবায় দিবসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়েছে।
সমবায়ীরা অভিযোগ করেন, চাঁদার টাকা জায়েজ করতে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে সমবায় কর্মকর্তারা।
উপজেলা, জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশালে বিভিন্ন ক্যাটাগরির (শ্রেণির) প্রায় ৩০০টি সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (বহুমুখী সমবায় সমিতি) রয়েছে।
সমবায় কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর নভেম্বরের প্রথম শনিবার জাতীয়ভাবে সমবায় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবার সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন। সরকারিভাবে দিবসটি উদযাপনের জন্য ছিল বরাদ্দও। কিন্তু দিবস উদযাপনের নামে গত এক সপ্তাহ ধরে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে নামেন বরিশাল জেলা ও উপজেলা সমবায় অফিস।
অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলা সমবায় অফিসার গোলাম কবির শরীফ তার অধিনস্ত অফিসার ও সমবায়ীদের থেকে দিবস পালনের জন্য প্রায় দশ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন। জেলা সমবায় অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, আমার নাম গোপন রাখবেন যদি যদি প্রকাশ করেন তাহলে আমি হয়রানীর শিকার হবো। ঐ কর্মকর্তা বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ সমবায় দিবস পালনের নামে চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত ছিল জেলা সমবায় অফিসার গোলাম কবির শরীফ।
বরিশালের বড় আকারের একটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তা জানান, তিন-চার দিন আগে সমবায় কর্মকর্তারা তাঁদের কার্যালয়ে এসে সমবায় দিবস উদযাপনের জন্য একটি চিঠি দেন। পরে দিবস উদযাপনের জন্য তাঁদের সমিতির জন্য ১০ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
একই দাবী করেছেন বিভিন্ন সমবায় সমিতির লোকজন। তারা জানান, সমবায় কর্মকর্তাদের হুমকির কারণে তাঁরাও চাঁদা দিয়েছেন।
বিভিন্ন সমিতির সদস্য ও সমবায়ীরা জানান, নানা প্রতিকূলতায় তাঁরা বহুমুখী অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতার বদলে উপজেলা ও জেলা সমবায় কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় চাঁদা ও ঘুষ আদায় করছেন। সমবায় কর্মকর্তাদের দাবি করা চাঁদা ও ঘুষ না দিলে সমিতির নিবন্ধন বাতিলের হুমকি দিয়ে তাঁদের জিম্মি করে রেখেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমিতির সদস্যরা জানান, প্রতিবছর সমিতির অডিট (সরকারিভাবে হিসাব পরীক্ষা) করতে হয়। দাবি করা মোটা অঙ্কের ঘুষ না দিলে অডিট করতেও আসেন না সমবায় কর্মকর্তারা। পর পর দুই বছর সমিতির অডিট না হলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল হয়। ফলে সমিতির সদস্যদের অনেকটা জিম্মি করে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করেন কর্মকর্তারা।
ভুক্তভোগী সমবায়ীরা বলেন, ‘জাতীয় সমবায় দিবস আর সমিতির অডিটকালেই নয়, প্রতিবছর সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠনকালেও সমবায় কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয়।’
চাঁদাবাজি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা সমবায় অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও সমবায়ীরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিছু সমিতির সদস্যদের সহযোগিতায়। তবে কোনো সদস্যকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করিনি।
এদিকে বরিশাল সদর উপজেলা সমবায় অফিসের শেখ ইউনুস সাংবাদিকদের জানান, আমরা চাঁদা তুলে জেলা সমবায় অফিসে জমা দিয়েছি, আয়োজক ছিল বিভাগীয় ও জেলা সমবায় অফিস।
দিবস উদযাপনের জন্য সমবায়ীদের থেকে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজী প্রসঙ্গে উপ- নিবন্ধক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, চাঁদা আদায় করেছে জেলা সমবায় অফিস।
এব্যাপারে বরিশাল জেলা সমবায় অফিসের উপ-সহকারী নিবন্ধক মোহাম্মদ খোর্শেদ আলমের মোবাইলে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অফিসের বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, সমবায়ীদের থেকে চাঁদা নয় কিছু আর্থিক অনুদান নেয়া হয়েছে। অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলি এ কথা বলে কল কেটে দেন।