৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বাংলা সাহিত্যে এক কালজয়ী নাম হুমায়ুন আহমেদ

শামীমা সুলতানা:

নন্দিত কথা সাহিত্যিক এবং সুদক্ষ জনপ্রিয় একজন নির্মাতা, নানারকম কালজয়ী সৃষ্টির স্রষ্টা হুমায়ুন আহমেদ। আজ আমাদের বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি, পথিতযশা কবি ও সাহিত্যিকদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখাযায় অধিকাংশই জীবদ্দশায় পাননি জনপ্রিয়তা কিংবা তাদের যোগ্য স্বীকৃতি। হুমায়ুন আহমেদ সেদিক থেকে একদমই ব্যতিক্রম তিনি জীবদ্দশায় পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা।

তিনি মেধা মনন আর তার নিরেট সৃষ্টি কর্মে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছেন আমাদের সাহিত্য ভান্ডারকে। সাহিত্য সংস্কৃতির সর্বস্তরে রয়েছে তার সৃষ্টি। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন অন্যতম । স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তিনি ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিককার। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার সমস্ত সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা সুদুর প্রসার।
তার সৃষ্টির প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এই সৌভাগ্যবান লেখক। জীবনের শেষ দিন অব্দি উপভোগ করে গেছেন পাঠক, ভক্তের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। অমর হয়ে আছেন থাকবেন বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্টির মাঝে, থাকবেন সাহিত্য প্রেমীদের হৃদয় যুগ যুগ ধরে।

আজ তার উপন্যাস নিয়ে শ্রদ্ধা রেখে অনুভুতি প্রকাশের সামান্য চেস্টা করছিঃ
হুমায়ুন আহমেদের বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীরর অন্তর্ভুক্ত। হুমায়ুন আহমেদ একজন ম্যাজিশিয়ান বটে। তার লেখা শতাধিক চরিত্র এমন যা পাঠে বিষণ্ণ মনকেও ম্যাজিকের মত প্রশান্তি এনে দেয়। উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র হিমু। কিছু নারী পুরুষ হিমুকে বাস্তবিক চরিত্র বলে মনে করেন আবার কেউ কেউ নিজেকে হিমু সাজিয়ে রাখেন। এটাই হলো তার সৃষ্টির স্বার্থকতা। তার মিসির আলী চরিত্রও আলোচিত।
তার লেখা উপন্যাস সমুদ্র বিলাস বর্তমান পর্যটকদের আকর্ষনীয় দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে। এটি অন্য দ্বীপের মতই সাধারণ ছিলো। সেই সাধারন দ্বীপটি বিশ্ব পর্যটকদের কাছে অসাধারণ ও আকর্ষনীয় করেছে তার সৃষ্টির আলোকে। এ দ্বীপের ভ্রমণ কাহিনী ঘিরে তার লেখা দুটি বই দ্বারুচিনি দ্বীপ ও রুপালী দ্বীপ প্রকাশিত হয়ার পরে দেশ বিদেশের পর্যটকদের ভ্রমনে আগ্রহ বাড়ে। পর্যটন শিল্প বিকাশে তার অবদান অতুলনীয়। বাংলা সাহিত্যের অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরুস্কার লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে ভুষিত করেন।
একাদিক উপন্যাস দেশ বিদেশে সৃষ্টি করেছে লাখ লাখ পাঠক। পাঠক তার লেখায় নিজেকে খুঁজে পায় উপন্যাসের চরিত্রের মাঝে । তার অন্যতম উপন্যাস হলো জোসনা ও জননীর গল্প,লীলাবতী, বৃষ্টি বিলাস, নীল অপরাজিতা, সমুদ্র বিলাস ইত্যাদি ।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের কয়েকটি উপন্যাস নিয়ে আলোচনাঃ
নন্দিত নরকেঃ প্রথম উপন্যাস “নন্দিত নরকে” ১৯৭২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটিতে নিজেকে বেছে নেন উপন্যাসের কাহিনী কথক হিসেবে। এখানে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনসংগ্রাম , দুঃখ , কষ্ট , হাসি , কান্না, যৌনতা স্থান পেয়েছে। গল্পে হুমায়ূনের সাথে থাকে তার অপ্রকৃতস্থ এক বছরের বড় বোন রাবেয়া , সাথে ছোট বোন রুনু , বাবা আর মা, বাবার বন্ধু আশ্রিত মাস্টার কাকা, বাবার প্রথম ঘরের সন্তান মন্টু । রাবেয়া হারিয়ে যায় ,খুঁজে বের করে আনেন মাস্টার কাকা।পরেই সন্তানসম্ভবা। সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে একটি পরিবার এগিয়ে যেতে থাকে । শেষে মন্টু মাস্টার কাকাকে খুন করে ,
বৃষ্টি বিলাসঃ একুশে বইমেলা ২০০০ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এটি একটি রোমান্টিক উপন্যাস। “বৃষ্টি বিলাস”উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের বেশি বিক্রিত বইয়ের একটি। এই উপন্যাসে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনি বর্ননা করা হয়েছে। পরিবারের কর্তা একজন ব্যাংক ক্যাশিয়ার আবদুর রহমানের পরিবারের কাহিনী নিয়েই এই উপন্যাস।উপন্যাসটির সর্বত্র জুড়ে রয়েছে ভালবাসার ছোঁয়া। কখনো পাওয়া কিংবা না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই “বৃষ্টি বিলাস” সৃষ্টি। মধ্যবিত্ত পরিবারের টান পোড়ন নিয়ে গড়া হুমায়ূন আহমেদের সার্থক এই প্রেমের উপন্যাসটি।
নীল অপারাজিতাঃ এ উপন্যাসে খুব সূক্ষ্মভাবে করিম সাহেবের মুখোমুখি আরেকটি বিপরীত ধরনের চরিত্র দাড় করেছেন, চরিত্রটি শওকত সাহেবের। করিম সাহেবের সারল্য, কিংবা নির্বুদ্ধিতায় শওকত সাহেব যতবার বিব্রত হয়েছেন ঠিক ততবারই পাঠকও একই ভাবে বিব্রত অনুভব করেছেন। তিনি বর্তমান সময়ের অন্যান্য লেখকদের চেয়ে যে সুবিধাটি বেশি পেয়েছেন সেটি হচ্ছে চিঠির ব্যবহার। বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাঁর উপন্যাসে চিঠির ব্যবহার দেখা গেছে। সহজ ভাষায় লেখা এসব চিঠি সাবলীলভাবে তাঁর গল্পের দুটি দৃশ্যের মাঝে সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছে।
দেয়ালঃ ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে দেয়াল রচনা শুরু করেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। কিছুদিন বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ক্যানসার চিকিৎসা চলাকালে নতুন করে এটি রচনায় মনোনিবেশ করেন তিঁনি, যদিও শেষ পর্যন্ত উপন্যাসটির চূড়ান্ত রূপ দেয়ার সুযোগ পান নি।উপন্যাসটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের পটভুমিতে রচিত। এখানে লেখক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে সমসাময়িকভাবে নিজেকেও উপস্থাপন করেছেন। কয়েকটি চরিত্র হল: শেখ মুজিবুর রহমান,খালেদ মোশাররফ,সৈয়দ নজরুল ইসলাম,জিয়াউর রহমান , চা বিক্রেতা কাদের বাঙ্গালী,কর্নেল তাহের প্রমুখ।
একাধিক উপন্যাসের উপর ভিত্তিকরে চলচ্চিত্র নির্মান করা হয়েছে। তিনি সাহিত্য কর্মের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষারও নিদর্শন রেখেছেন। প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদ আমাদের দেশের গর্ব আমাদের অহংকার।হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ইং -মৃত্যু ১৯ জুলাই, ২০১২ইং।এই কালজয়ী লেখকের আজ জন্মদিন। তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকুক সকলের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সর্বশেষ