পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর বাউফলে ননদের দায়ের করা মামলায় কারাগারে আছেন নুপুর আক্তার। তার একমাত্র শিশুসন্তানের নাম আলিফ। তার বয়স মাত্র ৬ বছর। বাবার দ্বিতীয় বিয়ের সূত্র ধরেই এই মামলা। এই অবস্থায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই আলিফ বলে উঠছে, ‘তোমরা আমার মাকে এনে দাও’।
আলিফের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে। সে উপজেলা সদরের বাউফল দাসপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশ্রেণির ছাত্র।
আলিফের বাবা মিরাজকে মারধরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার মা নুপুর আক্তার, নানি মোছা. রেহেনা বেগম (৪৫), খালা আকলিমা বেগমকে (২২) গত শনিবার বিকেলে পুলিশ গ্রেফতার করে পরের দিন সকালে কারাগারে পাঠায়। আদালত রেহেনা বেগমকে জামিন দেন। নুপুর ও আকলিমাকে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাসপাড়া গ্রামের মিরাজ ও নুপুরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর তারা দুজনে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে রয়েছে ছয় বছর বয়সী আলিফ নামের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। সংসার জীবনে তারা সুখেই ছিলেন। পরবর্তীতে মাদরাসা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে মিরাজের চাকরি হয়। সেই সুবাদে মিরাজ ঢাকায় থাকেন। দুই বছর আগে স্ত্রী নুপুরকে না জানিয়ে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে। শুরু হয় পারিবারিক কলহ। দ্বিতীয় স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বাড়িতে এসে প্রায়ই নুপুরকে মারধর করতেন মিরাজ। নুপুরের শশুর বাড়ির লোকজন মিরাজের পক্ষ নেন। তাদের অত্যাচারের কারণে ২০-২৫ দিন আগে বাবার বাড়িতে এসে ওঠেন নুপুর।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুপুরের বাবার বাড়িতে মিরাজ গিয়ে তাকে মারধর করতে থাকেন। তাকে রক্ষা করতে নুপুরের মা রেহেনা বেগম ও বোন আকলিমা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করেন। একপর্যায়ে তারা (নুপুর, রেহেনা ও আকলিমা) আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে মিরাজ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন। ওই ঘটনায় মিরাজের বোন হ্যাপী বেগম (৩২) বাদী হয়ে মিরাজের স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্যালিকাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে বাউফল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে সাতজনকে। তারা সবাই মিরাজের স্বজন।
মিরাজের একমাত্র ছেলে আলিফ বলে, ‘আমার মায়ের কোনো দোষ নেই। সব দোষ বাবার।’
স্থানীয় মো . খলিলুর রহমান বলেন, ‘মিরাজের স্বভাব-চরিত্র ভালো না। শুনেছি দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে প্রায়ই নুপুরকে মারধর করা হতো। গত বৃহস্পতিবার মিরাজ তার স্ত্রী নুপুরকে মারতে থাকেন। তখন নুপুরের মা ও বোনের প্রতিবাদের মুখে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চোখের ওপরের অংশে আঘাত পান। সেই ঘটনায় নুপুর ও তার বোন আকলিমা কারাগারে আছেন। এটা খুবই কষ্টদায়ক।’
এ বিষয়ে মিরাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে মামলার বাদী ও মিরাজের বোন হ্যাপী বেগম বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন না। মিরাজই ভালো বলতে পারবেন।’
বাউফল থানার পরিদর্শক আল মামুন বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হবে।