সঞ্জয় ব্যানার্জী, দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।।
টিভি দর্শকরা বলছেন, টেলিভিশন তাদের প্রধান বিনোদনমাধ্যম। সব চ্যানেল তারা দেখতে চান। টিভি দর্শক মুক্তা রানী বলেন, ‘সরকার ও কেব্ল অপারেটরদের দ্বন্দ্বে আমরা সাধারণ দর্শকরা কেন বঞ্চিত হব। আমাদের কেন জিম্মি করা হবে?’ দর্শকদের ধরে রাখত ব্যার্থ দেশি চ্যানেলগুলো
সারাদিন সংসারের কাজকর্ম করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে টিভির সামনে বসেন স্বরমিলাসহ একাধিক নারীরা। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ঘটল ছন্দপতন। টেলিভিশন খুলে দেখেন বিদেশি চ্যানেল বন্ধ। নাতি দৌড়ে এসে জানায়, তার রুমের টিভিতে কার্টুন দেখা যাচ্ছে না। সেদিন থেকে নাতি টিভির পরিবর্তে মোবাইলের মাধ্যমে ইউটিউব দেখে সময় কাটাচ্ছে, কিন্তু কালী রানীর সন্ধ্যা যেন আর কাটছেই না।
মুক্তা রানী বলেন, ‘নতুন নতুন স্মার্টফোন বাসায় চালাই। মেয়ে দেখিয়ে দিলো, কীভাবে ইউটিউবে সিরিয়াল দেখা যায়। তবে এখনও ভালোমতো ইউটিউবটা বুঝি না। সব সিরিয়ালের নতুন পর্বগুলোও খুঁজে পাই না। খুব বিরক্ত লাগছে।’ পটুয়াখালীর দশমিনায় থাকেন অপু রানী। তার ঘরের টিভিতে সবসময়ই চলত স্টার জলসা। তিনি বলেন, ‘আমি ঘর থেকে তেমন বের হই না। সারা দিন ঘরের কাজই করি। এইসব চ্যানেলই তো আমার বিনোদন। এখন স্মার্টফোনে ইউটিউব দেখি। তবে সিরিয়ালগুলো খুব মিস করছি।’ ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপনমুক্ত) ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের ওপর সরকার বিধিনিষেধ জারির পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সব বিদেশি চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে কেব্ল অপারেটররা। আর এতে হঠাৎ করেই পানসে জীবনের মুখে পড়েছেন দেশের কোটি কোটি টিভি দর্শক।
বিশেষ করে পরিবারের শিশু ও নারীরা মহাবিরক্ত। তারা বলছেন, তারা সব ধরনের টিভি চ্যানেল দেখারই সুযোগ চান। আইনের মধ্যে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও সংশ্লিষ্টদের।উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের নাজমুন নাহারের দিন কেটে যায় ঘরের কাজ আর নাতির দেখভালে। সন্ধ্যায় ছেলের বউ অফিস থেকে ফিরলে অবসর পান তিনি। এরপর ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসার সিরিয়াল দেখে তার সময় কাটে।
গছানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে নাদিয়া। টিভি দেখার জন্য বাবা-মা তাকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন। আট দিন হলো টিভি দেখা হচ্ছে না বলে এতোটাই মন খারাপ যে, নাওয়া-খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে সে। দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ হওয়ায় নাদিয়ার মতো অনেক শিশুরই মন খারাপ। নাদিয়ার মা শাহনাজ বেগম একজন গৃহিনী। তিনি বলেন, ‘টিভিতে সে কার্টুন দেখে। অনেক সময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকও দেখে। কয়েকদিন ধরে এসব চ্যানেল বন্ধ বলে খুবই মন খারাপ তার। খাওয়া-দাওয়া করতেই চাচ্ছে না। প্রায় জোর করেই খাওয়াতে হচ্ছে।’ বিদেশি চ্যানেল বন্ধে টিভি দর্শকের ‘পানসে’ জীবন টিভিতে কার্টুন চ্যানেল বন্ধ বলে শিশুরা স্মার্টফোন ইউটিউব দেখে সময় কাটাচ্ছে সন্তানের মন ভালো করতে তিনি হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্টফোন। তাতেও বিপত্তি হয়েছে। এখন তার হাত থেকে ফোন নিলেই খিটমিট করছে। শাহনাজে বেগমের ভয়, এখন না আবার স্মার্টফোন আসক্তি ধরে যায় নাদিয়া। দেশের চ্যানেল কেন দেখেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহনাজ বলেন, ‘দেশের চ্যানেলগুলোতে দেখার মতো কিছু নেই। সব চ্যানেলে কেবল খবর আর টক শো। যেগুলোতে কিছু নাটক দেখায়, সেগুলোর মানও খুব বাজে। দেখার মতো না।’ তার সঙ্গে বসে নিয়মিত ভারতীয় চ্যানেল দেখেন গৃহকর্মীও। তারা আরও বলেন, টিভি দেখতে পারছেন না বলে মন খারাপ; কোনো কাজেই মন বসছে না।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দাস পাড়া গ্রামের নাজমুল হক টিভিতে মূলত খেলা দেখেন। এখন চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা দেখতে পারছেন না বলে খুব বিরক্ত তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ও কেব্ল অপারেটরদের দ্বন্দ্বে আমরা সাধারণ দর্শকরা কেন বঞ্চিত হব। আমাদের কেন জিম্মি করা হবে?’
দশমিনা কেব্ল নেটওয়ার্ক পরিচালক কবির হোসেন সোনালী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের কথা বলা হয়েছে। আর ক্লিনফিড দেখানোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় তো আমরা বিদেশি চ্যানেল দেখাতে পারি না। কারণ সব চ্যানেলেই কম বেশি বিজ্ঞাপন আছে। তিনি আরও জানান, বিদেশি চ্যানেল না চলায় গ্রাহকরা মাস শেষে বিল দিচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।
