১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভাঙ্গনে দিশেহারা মেঘনা পাড়ের মানুষ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শামীম আহমেদ :: বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমিক্ষা অনুযায়ী বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মেঘনার পানি। ভাঙনে অতিষ্ট মেঘনাকুলবাসী দিশেহারা সম্বলহীন অসহায় হিজলার মানুষ। মেঘনায় স্রোত ও পনি বৃদ্ধির কারনে উপজেলা বিভিন্ন অঞ্চল বেপরোয়া ভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা সদর, বাউশিয়া, বাহেরচর, পুরাতন হিজলা, দুর্গাপুর, হরিনাথপুর, হিজলা-গৌরব্দী ধুলখোলাসহ এলাকার বিভিন্ন এলকা এখন বিক্ষিপ্ত ভাঙ্গনে, মেঘনার গর্ভে তলিয়ে গেছে শত শত বাড়ি,ঘড়, স্কুল। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে সমগ্র হিজলার চরাঞ্চল।

র্দুযোগ র্দুভোগ, নদী ভাঙ্গন হিজলার মানুষের নিত্য দিনের সাথী। “প্রমত্তা মেঘনা যেন হিজলা উপজেলার দুঃখ।” নদী ভাঙ্গন হিজলাবাসীর পরম আত্মীয়। বছর বছর বান বন্যার পানি, নদী ভাঙ্গন এ যেন হিজলাবাসীর পরম পাওয়া। মেঘনার ভাঙ্গন হিজলাবাসীর পিছু ছাড়ছে না।

এব্যাপারে বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পন্ডিত শাহাবুদ্দিন জানান, বড়জালিয়ার ৮টি গ্রাম, মেঘনা পাড়ে। আস্তে আস্তে সব ভাঙ্গনে ক্ষুদাত্ব মেঘনার পেটে চলে যাচ্ছে,ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসাবে আমি ভাঙ্গনের কাছে আমার জনগনের মতো আমিও অসহায়, চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরও জানান, ৬ কিলোমিটার ভাঙ্গছে হিজলার বাউশিয়ার মেঘনা নদী। একমাত্র বাউশিয়া গ্রাম রাক্ষুসী মেঘনা চোখের সামনে গিলছে। মাত্র ২ দিনেই বাউশিয়া গ্রামের শতাধিক বসত ঘর মেঘনা গিলে ফেলেছে। কয়েকটা দিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোন প্রধান হারুন অর রশিদ পরিদর্শন করে গেছেন। সেই স্থান এখন মেঘনার পেটে। ২০০ মিটার দুরে উপজেলা পরিষদ প্রশাসনিক ভবন। স্থানীয় এমপি পংকজ নাথের সহায়তায় বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে হিজলা উপজেলা রক্ষার্থে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। সে টাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এমপি পংকজ নাথ নিজ হাতে জিও ব্যাগ ফেলে কাজের সুচনা করলেও সে ব্যাগ মেঘনা গিলে ফেলছে। সামনে আরও বর্ষা রয়েছে, উপজেলার অবস্থা কোথায় দাড়ায় তা বলা মুশকিল। ভাঙ্গছে তো ভাঙছেই, ভাঙছে পুরাতন হিজলা, দুর্গাপুর, লক্ষীপুর, বাহেরচর। কোনটিই রক্ষা করা আমাদের মতো ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্ভব নয়।

হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আঃ লতিফ শিকদার জানান, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, নরিয়া জেলার সব পানি মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসগরে ঢোকে হিজলার মুল ভূখন্ড দিয়ে। প্রবল পনির তোড়ে ভেসে গেছে তার ইউনিয়ন। ৫২ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি “ বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়” হরিনাথপুর বাজারসহ গুরুত্বপুর্ন পাকা স্থাপনা ভবন যেকোন মুহুর্তে মেঘনার ভাঙ্গনে তলিয়ে যেতে পারে শুধু সময়ের ব্যাপার। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হিজলায় কর্মরত গেজ মাষ্টার তৌহিদুল আলম এবং গেজ মাষ্টার আঃ হাদি জানান, বর্তমানে উজান থেকে নেমে আসা পহাড়ি ঢল, জোয়ারের প্রভাবের কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে হিজলা উপজেলার মেঘনার দুটি পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে হিজলা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাউশিয়ার মেঘনা এবং অপটি হচ্ছে হরিনাথপুর এলাকার আবুপুর অঞ্চল। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারনে এখানকার ভাঙ্গনের ব্যপকতা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে খাই খাই করছে মেঘনা। পুরো বাউশিয়া এখন শেষ।আছে শুধু হিজলা উপজেলা। যে কোন সময় উপজেলা তলিয়ে যেতে পারে মেঘনার গর্ভে। স্থানীয় মকবুল আলম মাষ্টার, রফিক খান, আলী আকবর শিকদার, বাকের ফকির এর ভাষ্য এতো বড় মেঘনা, সেখানে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার জিও ব্যাগ। এতে কি হবে। এতো নদীর মাছের আহার, দিল আর পরের দিন নাই।

ভাঙ্গনকবলিত অসহায় পরিবারগুলো বলছেন, ভিটেমাটি নেই। একটি মাত্র রাস্তা আছে বাউশিয়ায়। সেখানে রয়েছে তিনটি সাইক্লোন সেল্টার, একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মাদ্রাসা, সমজিদ। হাজারো পরিবারের গাদাগাদি করে বসবাস। এক সপ্তাহে যে ভাবে মেঘনায় ভাঙছে তাতে করে সরকার আমাদের রক্ষ করতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে মেঘনার ভাঙনে শতাধিক পরিবার ভিটে ছাড়া হয়েছে। তাদের সরকারি সহায়তা, বা মাথাগোজার ঠাই কোন পক্ষ করেননি। হারিয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি, ঐতিহ্যবাহি শুপারির বাগান, বাড়ি। বানভাসি এবং অসহায়দের সরকারি সাহায্য দিয়ে পুরোন করা মোটেও সম্ভব না। তরিঘরি দ্রুত বাঁধ রক্ষার্থে কাজ না করলে এ মানুষগুলো সরকারের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

এবিয়ষে হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, এখন পর্যন্ত সরকারী কোন ত্রান বা আর্থিক সসহায়তা প্রদান করা হয় নি। হিজলা উপজেলা লাগোয়া পানিউন্নয়ন বোর্ডের ডাম্পিং কাজ পরিদর্শন করছেন কিনা এবং বাউশিয়া ও নদী ভাঙন পরিবারগুলো সরকার থেকে অনুদান পেছেন কিনা এমন প্রশ্নে জানান, এখনাকার ভাঙন খুবই ব্যাপকতা পেয়েছে। স্থান পরিদর্শন করি। সরকারি ত্রাণ আসলেই তাদেরকে তালিকায় আনা হবে।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিনাঞ্চল জোন প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, সরকার থেকে যে পরিমান অর্থ দেয়া হয়েছে তা দিয়েই কাজের সুচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাউশিয়া সহ হিজলা উপজেলা রক্ষা বাধের জন্য ৪ শত ৮০ কোটি টাকার একটি মেঘা প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কিছুটা বাঁধ রক্ষায় লাঘব হতো। আমরা ভাঙন রোধে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ