বরিশাল বাণী: প্রেমিকের নেওয়া পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিষ পানে প্রান গেল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মেদাকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী প্রেমিকা রিয়া আক্তারের (১৫)। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচিত করার অভিযোগে প্রেমিক সাগর বেপারীর সহপাঠি বন্ধু সাজ্জাদ সরদার, নিহত প্রেমিকার বান্ধবী সমাপ্তি দত্তকে আসামি করে বৃহস্পতিবার গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের নিহতের মা মুরশিদা বেগম (৩৫)। গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ এজাহারভূক্ত প্রধান আসামি প্রেমিকসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মেদাকুল গ্রামের আলী আকবর ফকিরের কন্যা ও মেদাকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী প্রেমিকা রিয়া আক্তারকে (১৫) বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করে আসছিল একই ইউনিয়নের পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের হারুন বেপারীর ছেলে ও একই বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাগর বেপারী (১৭)। বিষয়টি রিয়া তার বাবা-মাকে জানালে সাগর বেপারীর পরিবারের কাছে বিচার দেওয়া হলে সাগর ক্ষিপ্ত হয়ে রিয়াকে বিভিন্ন সময় শ্লীলতাহানি করে। পরবর্তিতে এক পর্যায়ে এক বছর আগে রিয়ার সহপাঠি ও ঘনিষ্ট বান্ধবী সমাপ্তি দত্ত (১৫) ও সাগর বেপারীর সহপাঠি ও ঘনিষ্ট বন্ধু সাজ্জাদ সরদার (১৭) মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্প্রতি সময়ে রিয়ার পরিবার বিষয়টি জানতে পারলে তার উপর চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে প্রেমিক সাগর বেপারীর মাঝে পরিবারের চাপের মধ্যে প্রেমিকা তাকে ভালবাসবে কিনা নিয়ে কিছুটা অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রিয়ার বান্ধবী সমাপ্তি দত্ত (১৫) জানান, সোমবার তারা প্রাইভেট পড়তে গেলে ভালবাসার বিশ্বাস-অবিশ্বস নিয়ে রিয়া ও সাগরের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাগর রিয়াকে বলে “তুমি আমাকে কতটুকু ভালবাস? তোমার বাবা মা আমার সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দিতে রাজি না হলে তুমি আমার ভালবাসার জন্য প্রান দিতে পার কিনা?” এ প্রশ্নের উত্তরে রিয়া প্রেমিক সাগরকে বলে তুমি কালকে (মঙ্গলবার) বিষ নিয়ে এসো খেয়ে দেখাবো। সমাপ্তি দত্ত থানা হাজতে বলে, মঙ্গলবার সকালে আমরা চারজনে প্রাইভেট পড়তে যাই । পড়া শেষে আমরা চারজনে বিদ্যালয়ের নতুন-পুরাতন ভবনের মাঝখানে ফাকা জায়গায় যাই। সেখানে কথা বার্তার এক পর্যায়ে পূর্বের (সোমবারের) কথামত সাগর বেপারীর তাদের পান বরজে দেয়ার এক বোতল কীটনাশক নিয়ে আসে এবং রিয়ার হাতে দেয়। সাথে সাথে রিয়া কীটনাশক পান করে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আমি (সমাপ্তি) সাগর বেপারী ও সাজ্জদ সরদার তিনজনে মিলে রিয়াকে নিয়ে মেদাকুল বাজারের ইসলামিয়া ফার্মেসীর চিকিৎসক ডাঃ বোরহানের কাছে যাই। পুলিশ কেস বলে সে চিকিৎসা না দিয়ে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেন। আমরা রিয়াকে সেখানে নিয়ে গেলে একইভাবে তারা মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। আমরা রিকসা ভ্যানে করে মঙ্গলবার বিকেলে রিয়াকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
রিয়ার মা মুরশিদা বেগম বলেন, বখাটে সাগর বেপারী আমার মেয়েকে উত্যক্ত করে বিভিন্ন সময় শ্লীলতাহানি করেছে। এ নিয়ে তার বাবা-মার কাছে একাধিকবার বিচার দেওয়ায় সে রিয়ার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। এক পর্যায়ে আসামি সমাপ্তি দত্ত ও সাজ্জাদ সরদারের সহায়তায় মেয়েকে পটিয়ে সাগর বেপারী প্রেমের সর্ম্পক তৈরী করে পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। গৌরনদী থানা হাজতে থাকা সাগর বেপারীর কাছে অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে সে বলে, আমি রিয়াকে খুব ভালবাসতাম। ওকে আমি বিষ খাওযাতে চাইনি। আমি খেতে চেয়েছি কিন্তু ও তা টেনে নিয়ে নিজেই খেয়ে ফেলেছে।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ তৌহীদুজ্জামান জানান, প্রেমিক সাগর বেপারী ও তার বন্ধু সাজ্জাদ সরদার ও বান্ধবী সমাপ্তি দত্ত অসুস্থ্য স্কুল ছাত্রী রিয়াকে নিয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পৌছলে ততক্ষনে রিয়া মারা যায়। হাসপাতালে তিনজনকে চিকিৎসকরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় সন্দেহ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাদারীপুর সদর থানাকে অবহিত করে তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করে। মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের মর্গে পাঠান এবং আটক তিনজনকে বুধবার রাতে গৌরনদী থানায় সোপর্দ করে। তিনি বলেন, (ওসি তদন্ত) স্কুল ছাত্রী রিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে নিহত রিয়ার মা মুরশিদা বেগম (৩৫) বাদি হয়ে সাগর বেপারীকে (১৭) প্রধান, রিয়ার বান্ধবী সমাপ্তি দত্ত (১৫) ও সাগরের সহপাঠি সাজ্জাদ সরদারকে (১৭) আসামি করে বৃহস্পতিবার গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আটক তিনজনকে বৃহস্পতিবার মামলায় গ্রেপ্তার করে তাদের শিশু আইন মেনে শিশু আদালতে পাঠানো হয়েছে।