পিরোজপুর প্রতিনিধি ::: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান শিক্ষক জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার রোষানলে ৫ মাসের বেশি পালিয়ে থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজের আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খান চরম দুর্ণীতি, দলীয়করণ ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যান। স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারী প্রধান শিক্ষক) মো. এনামুল হক মৃধা পলাতক প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খানের বেতন-ভাতার সুযোগ করে দেয়ায় অভিভাবক ও এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আলমগীর হোসেন খান উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়ন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
জানা যায়, আলমগীর হোসেন খান ২০১০ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয়করণ, দুর্ণীতি ও অনিয়মের আখরায় পরিনত করেন। তার ১৩ বছরের চাকরিকালে নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতন, পরিক্ষার ফি, টিউশন ফি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার ভাড়া, ২৯টি স্টল ভাড়া এবং মোটা অংকের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বসবাসকারীদের প্রতিষ্ঠানের জমি ছেড়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রযেছে। বিজ্ঞানাগার, শহীদ মিনার, পুকুর খনন ও আইসিটি ল্যাবসহ বিভিন্ন খাতে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ করে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি আ.লীগ অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীসহ লাঠি সোটা নিয়ে মিরুখালী বাজারে বিরোধী দল দমনে মহরা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে দেয়াল লিখন করলে আলমগীর হোসেন খান ওই শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে।
দেয়াল লিখনে অংশ গ্রহনকারী এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাহাদ আমীনের পিতা অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও স্থানীয় জামায়াত ইসলামী নেতা ডা. নুরুল আমিন জানান, সেদিন তাদের দিয়ে দেয়াল লিখন মুছতে বাধ্য করা হয় এবং চরমভাবে লাঞ্চিত করা হয়। আরেক অভিভাবক স্কুল শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন স্কুলে এখনও সরকারি বই বিতরণের সময় সেশন চার্জের নামে টাকা নেয়া হয়।
আলমগীর হোসেন খানের দুর্ণীতি ও অনিয়মের তদন্ত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদনকারী গোলাম কিবরিয়া বাচ্চু জানান, তাদের আবেদনের পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পর ২ মাস কেটে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেন খানকে পুনর্বাসনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মৃধা তাকে বেতন ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি, সাবেক মিরুখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধ্রণ সম্পাদক কামরুল আহসান খোকন জানান, ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেন খান এবং তার দোসররা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাকে আবার পুনর্বাসন করা হলে তারা মেনে নেবে না বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক মৃধা জানান, অনুপস্থিতিতে ৪ মাস বেতন দেয়া যায়। আর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেতন ভাতা করেন। বই বিতরণের সময় সেশন চার্জ ছাড়া আর কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কাইয়ুম জানান, অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খানের বিরুদ্ধে করা দুর্নিতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে রিপোর্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বেতন বন্ধ করা না করা অধিদপ্তরের ওপর নির্ভর করে।