১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
নাজিরপুরে পাশাপাশি খোঁড়া হচ্ছে একই পরিবারের সেই ৪ জনের কবর ভোলায় পূজা মন্ডপের গেট ভাঙচুরের সময় হিন্দু যুবক আটক রায়পুরায় পূজামণ্ডপের প্যান্ডেল ভাঙচুর নিয়ে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন কলাপাড়ায় সরকারী খাল দখলমুক্ত করতে দু-পক্ষের হামলা, আহত-৫ ঝালকাঠিতে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক বরগুনায় ধ*র্ষ*ণ প্রতিরোধক জুতা আবিষ্কার করলো স্কুলছাত্র দুমকিতে ছাত্র ব*লাৎকা*রের অভিযোগে প্রাইভেট শিক্ষক আটক বরিশালে পূজা মণ্ডপ পাহারা দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা স্কুল-কলেজের শিক্ষার মতো মাদ্রাসা শিক্ষাকেও কর্মমুখী করতে হবে: স্বপন মুলাদীতে পুকুরে গোসলে নেমে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

মা আমি দেশের জন্য যাচ্ছি, তুমি দুই ছেলেকে নিয়ে থাকবা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সঞ্জিব দাস ,গলাচিপা পটুয়াখালী ,প্রতিনিধি
জন্ম নেয়া ভাগ্যের ব্যাপার মৃত্যু হওয়া সময়ের ব্যাপার কিন্তু মৃত্যুর পরে মানুষের মনে বেঁচে থাকা কর্মের ব্যাপার’ এমন কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ফেইজবুকে লিখে গেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হওয়া শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) অনার্সের ছাত্র রাসেল মাহমুদের (২১) মৃত্যুর এক মাস পূর্ণ হলো।

তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চরশিবা গ্রামে।

‘মরলে শহিদ বাঁচলে গাজি, মা তোমার তিন ছেলের মধ্যে আমি যদি দেশের জন্য চলে যাই তুমি দুই ছেলেকে নিয়ে থাকবা, অনুমতি দাও মা। দাবি রাখবা না কথাগুলো বলল ৪ আগস্ট রাতে।’ এটাই তার শেষ কথা বলে জানান তার মা রাশেদা বেগম।

পারিবারিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের দিন রাসেল মাহমুদ আন্দোলনে নামলে পুলিশের এলোপাথারি গুলি তার মাথায় লাগে। যাত্রাবাড়ীতে এ ঘটনাটি ঘটে। বিকেলের কোনো এক সময় মায়ের কাছে ফোন আসছে, রাসেল আপনার কি হয়? সাথে সাথে ফোনটি মা রাসেলের বড় ভাইর কাছে দেয়, মা বলে রাসেলের কোনো এক বন্ধু ফোন দিয়েছিল। রাসেলের বুকে ইউনিভার্সিটির আইডি কার্ড ও মাথায় বাংলাদেশী পতাকা ছিল। রাসেলের বড় ভাই খবর পেয়ে সাথে সাথে খালাত ভাই আজিজুল ও মামা আলমগীর হোসেনকে খবর দেয়। রাসেলকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকে, বিভিন্ন হাসপাতাল তথা কোথায়ও পাওয়া যাচ্ছিল না। তার পরের দিন ৬ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে তার লাশ পড়ে আছে। রাসেলের মাথায় পেছন থেকে গুলি লেগে কপাল দিয়ে ভেদ করে বের হয়ে যায়। ততৎক্ষণে মার বুঝতে বাকি রইল না যে তার ছেলে আর বেঁচে নেই।

জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকাজলের চর শিবা আব্দুস ছালাম আকন আইডিয়াল স্কুল থেকে ২০২০ সালে মেধাবী রাসেল এসএসসি পাস করে। পরবর্তীতে ঢাকার শ্যামপুর বহুমূখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পাস করে।

পাশের পরেই সে সোনার গাঁ ইউনির্ভাসিটিতে বাংলা বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়। রাসেল মাহমুদ ঢাকার যাত্রবাড়ীর শনির আখড়ায় থাকত। রাসেল মাহমুদের তিন ভাই ছিল। বড় ভাই মিরাজ হাং ছোট ভাই মো: শাওন। বাবা ও বড় ভাই মানুষের বাড়িতে কাজ করে রাসেল মাহমুদকে পড়াত। এমনকি মা-ও কাজে সহযোগিতা করে ছেলেকে টাকা পাঠানোর চেষ্টা করত। নিজেদের সামান্যটুকু জমি থাকলেও অন্যের জায়গায় ঘর উঠিয়ে রাসেলের বাবা, মা ও ভাইসহ বসবাস করে।

মা বলেন, আমার ছেলেকে লেখা পড়ার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে ছিলাম মানুষের মতো মানুষ হওয়ার হবার জন্য। শয়তানরা মানুষ হতে দিল না, বাড়িতে ফিরে এলো লাশ হয়ে। বাবাকে কত কষ্ট করে টাকা পাঠাইতাম মানুষ করার জন্য, মানুষ হয়ে অভাবী সংসারে হাল ধরবে, মৃত্যুর পর রাসেলকে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে বাবারে কৈ পামু, কত মানুষ দেখতে পাই কিন্তু আমার বাবার মতো কাউকেও তো দেখতে পাই না। আমার রাসেলের সাথে শেষ কথা হয় ৪ আগাস্ট । আন্দোলনে নামার জন্য বাবা আমার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি, ওকে কেন মারা হলো, যারা আমার ছেলেকে মারছে তাদের যেন বিচার হয়। আমি যেন বিচার দেখে যেতে পারি। এমনকি আমার বাবা তো বিজয়ের হাসি দেখত পেলো না বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রাশেদা বেগম।

বাবা আবুল হোসেন জানান, আমার ছেলে অত্যন্ত ভদ্র ছিল। আমরা ওর কথামত চলতাম। টাকা পাঠাতে না পারলে রাসেল একটি প্রাইভেট পড়াত, নিজে ফল বিক্রি করত, এমনকি কাঁচা বাজারের সবজিও বিক্রি করত। মাঝে মাঝে টাকা দিলে নিত, না পারলে বলতো আর লাগবে না। আমরা অন্যের বাড়িতে কাজ করি। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করছে তার যেন বিচার হয়।

ভাই মিরাজ হাং জানান, ৬ আগস্ট রাতে গ্রামের বাড়ি চরশিবায় রাসেলের লাশ নিয়ে আসা হয়। এলাকায় লাশ আনা হলে শোকের ছায়া নেমে আসে। ৭ আগস্ট তাকে সকাল ১০টার সময় নামাজের জানাজা শেষে সোমবাড়িয়া বাজার ঈদ গা মাঠে সমাহিত করা হয়। এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েক হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কার্য্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন শোক জানিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিহত রাসেলের বাবার হাতে এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গলাচিপায় ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকারি সহযোগিতা পেলেই নিহতদের দেয়া হবে।

সর্বশেষ