অনলাইন ডেস্ক :: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প চরপালট গুচ্ছগ্রামের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গরিব অসহায় মানুষের জন্য এ ঘর বরাদ্দের কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী ঘরের কাজ শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে হস্তান্তর করা হয়েছে ৭০টি ঘরের চাবি। কিন্তু বরাদ্দ তালিকায় নাম থাকা অনেকেই ঘরের চাবি পায়নি। ঘর দেওয়ার আশ্বাসে নগদ টাকা দিতে না পারায় স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এক নারী ইউপি সদস্য শাহিনুর বেগমকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
জানা যায়, এ প্রকল্পে ১০ ফুট উচ্চতায় মাটি ভরাটের কথা থাকলেও ৬-৭ ফুট করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এ প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভরাট কাজ শেষ হলে ওই স্থানে প্রতিটি ঘরের জন্য দেড় লাখ টাকা করে ৭০টি ঘরে মোট ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজেরও দায়িত্ব মৌখিকভাবে উপজেলা প্রশাসন ওই কমিটিকেই দেয়। ১৬২ জন ঘরের আবেদনপত্র জমা দেয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এদের সবাইকে ভূমিহীন বলে সনদ দিলেও বাছাই করা ৭০ জনের মধ্যে অনেকেরই সচ্ছল পরিবার। যাদের ইতোমধ্যেই ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, শুনেছি প্রকল্পটির মাটি ভরাটের উচ্চতা ১০ ফুট করার কথা থাকলেও ৬ ফুটের বেশি হয়নি। এতে স্বাভাবিক জোয়ারের সময় নদীর পানিতে তলিয়ে যায় ঘরের মেঝে। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তাই বরাদ্দপ্রাপ্তরা ভোগান্তির মাধ্যে পড়েছে। তরিকুলসহ আরও অনেকে জানান, ঘর বরাদ্দের ৭০ জনের তালিকায় নাম থাকলেও অনেকেই চাবি পায়নি। তাদের ঘরে অন্য লোক উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা ইউএনওকে জানানোর পর তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানালেও কোনো কিছুই হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ঘর বরাদ্দ তালিকার ৬৬ নম্বরের উত্তমপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী ও স্বামী পরিত্যক্তা লাকি বেগম, ৬২ নম্বরের বেকার ব্যক্তি হেলাল হাওলাদার, ১৩৫ নম্বরের বর্গাচাষি সোহাগ বিশ্বাসসহ কয়েকজন জানান, আমাদের নামে ঘর বরাদ্দ হলেও আমরা চাবি পাইনি। এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
এদিকে সচ্ছল ব্যক্তিদের মধ্যে ঘর পেয়েছে খুলনায় চাকরিরত বরাদ্দ তালিকার ৪২ নম্বরের বাপ্পী গাজী। যার বাবা মামুন গাজী উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠিত বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজে চাকরিরত। এদের পরিবারের সবাই খুলনায় বসবাস করে। তালিকার ৪৭ নম্বর ব্যক্তি মিরাজ হোসেন গাজী। তার বাবা সোবহান গাজী উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠিত বড়ইয়া বালিকা বিদ্যালয়ে চাকরিরত। এ রকম সচ্ছল অনেককেই ঘর দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও সোহাগ হাওলাদার বলেন, রাজাপুর উপজেলার ৫নং বড়ইয়া ইউনিয়নের চরপালট গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে প্রকাশ্য বাছাইয়ের মাধ্যমে ৭০ জন উপকারভোগী নির্বাচন করেছি। এখন শুনছি ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রয়োজন। তবে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হলেও ভিটির মাটি ভরাট, চান্দিনার বেড়া নির্মাণ, বন্ধু চুলা লাগানোর কাজ করে দেওয়া হচ্ছে। নদীর কাছে হওয়ায় উলিল্গখিত কাজগুলো করার আগেই ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। তা না হলে ঝড়-বন্যায় ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সূত্র: সমকাল