ঝালকাঠি প্রতিনিধি ::: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা বিএনপির প্রধান কার্যালয় এখন নৌকার নির্বাচনী অফিস। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) নির্বাচনী প্রধান কার্যালয় লেখা একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর অব. ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর বিএনপির সাইনবোর্ড ওই অফিস থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির কার্যালয়গুলো এখন থেকে নৌকা মার্কার নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার করার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজাপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মাহিম হোসেন ও বর্তমান রাজাপুর শহর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রমজান মৃধা ওই ভবনে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন।
জানা যায়, বরিশাল বিভাগের বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর কাঁঠালিয়া) আসনে ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতেন ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। তিনি ১৯৭৯, ৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালে জোট সরকারের ভূমি ও আইন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তার মালিকানাধীন রাজাপুর বাইপাস মোড় সড়কের পাশে দুইতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে ২০০৩ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির স্থায়ী প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু গত ৩০ নভেম্বর শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর তার মালিকানাধীন ভবন থেকে বিএনপির সব সাইনবোর্ড ব্যানার সরিয়ে ফেলতে বললে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। আর মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সেখানে নৌকার নির্বাচনী সাইনবোর্ড টানানো হয়।
এদিকে ২০ বছরের বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে নৌকার নির্বাচনী অফিস করায় উপজেলার সব বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এক সময়ে যেই নেতার কারণে গর্বে বুক ভরে যেত আজ সেই নেতাকেই বেইমান, মীরজাফরসহ বিভিন্ন উপাধি দিচ্ছে বিএনপির কর্মীরা। তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ঝালকাঠি জেলা বিএনপি। এমনকি তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করা ভবনটি শাহজাহান ওমরের ব্যক্তিগত জায়গায় অবস্থিত। এটি তার নিজ অর্থে নির্মাণ করা। এতদিন তিনি বিএনপিতে ছিলেন তাই সেখান থেকে বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এখন তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তাই সেখান থেকে এখন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এখানে আমাদের কিছু বলার নাই।’
এবিষয়ে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এ এইচ এম খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, ‘তিনি যখন ঝালকাঠিতে এসেছেন তখন আমাকে বলেছেন তার ওই অফিস রাজাপুর আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে হিসেবে ব্যবহার করবেন। তখন তাকে বলেছি রাজাপুরে আওয়ামী লীগের অফিস আছে। আপনি নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। দীর্ঘ ২০ বছর ওই ভবনটি বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে হিসেবে ছিল। তবে ভবনটি এখন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রধান কার্যালয় হিসেবে চলবে।’
সেক্ষেত্রে আপনারা ওই অফিসে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম চালাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে যাব কী যাব না সেটা পরে দেখা যাবে।’
এবিষয়ে জানার জন্য সাবেক সেনা কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। নির্বাচনী আচরবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাকে শোকজ করেছে নির্বাচন আচরণবিধি অনুসন্ধান কমিটি।’