১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রিমান্ড শেষে কারাগারে হাদীস মীর ! খোশ মেজাজে সহযোগীরা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

আসাদুজ্জামান ॥ বহু অনিয়ম ও কেলেংকারীর হোতা পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বরখাস্তকৃত ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হলেও বেশ আরাম আয়েশে আছেন হাদিস মীরের অনিয়মের সহযোগী বেশ কয়েকজন খলিফা। তারা হাদিস মীরের মাধ্যমে ক্ষমতার দাপট, টিআর, কাবিখা, টিউবওয়েলের লিষ্ট, ঠিকাদারী কাজের ভাগবাটায়োরার সাথে জড়িতরা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে আরও বড় ধরনের বিপাকে পড়তে হতে পারে অনেকে।

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ন এই সদর আসনের এমপি কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীমের পাশে থেকে আরও অনিয়মের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। এতে ভাবমূর্তি ক্ষুন্নসহ দলের ঘাড়ে বদনাম চাপতে পারে। তাই হাদিস মীরের সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেটের বিষয়ে খতিয়ে দেখে দায়িত্বশীলদের এখনিই সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে যারা আওয়ামী বিরোধীদের সাথে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা ও ক্ষমতার সুবাতাসে গা ভাসিয়ে উল্টো আওয়ামী লীগকে বঞ্চিত করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার।

জানাগেছে, হাদিস মীরের এই অনিয়ম সিন্ডিকেটের সাথে বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। মাঝারি থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে কয়েকজন খলিফা। যারা সবসময় হাদিস মীরকে সাথে নিয়ে সুবিধা গ্রহণে ব্যস্ত ছিল।

সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের পদ-পদবী বিএনপি নেতা তুহিন মেম্বার ছিল হাদিস মীরের একান্ত সহযোগী। এলাকায় দাপটের পাশাপাশি সুবিধাও নিয়েছেন অনেক।

৪নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নয়ন ফরাজী ছিল হাদিস মীরের অঘোষিত ড্রাইভার। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালক হিসাবে সবসময় নয়ন ফরাজীকে সাথে রাখলেও তিনি ছিলেন হাদিস মীরের কাজকর্মের অঘোষিত দেখভাল করার দায়িত্বে, সেই সুবাদে কপালও খুলেছে তার। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক থেকে এক লাফে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন।

এছাড়াও সহযোগী ছিল ঐ এলাকার মোহাম্মদ জসিম ও ফারুক, তারাও হাদিস মীরের মাধ্যমে নানান সুযোগ সুবিধা নিয়ে অর্থ কামিয়েছেন। হাদিস মীর আটক হলেও তারা বেশ ফুরফুরা মেজাজে রয়েছে বেশ আমোদে।

ঐ এলাকার শহিদুল ইসলাম ওরফে ইটালী শহিদ এর সাথে হাদিস মীরের ছিল অঘোষিত আত্মার বন্ধন। অর্থাৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে নানান সুবিধা নিতে হাদিস মীরের সাথে এ ধরনের বেশ কয়েকজনের আত্মিক সখ্যতা ছিল। ঠিকাদারী কাজ, টিআর, কাবিখা ও সরকারের নানান সুবিধা পেতে সকলেই ছিল সক্রিয়।

সরকারের শীর্ষ নেতাদের সিল জালিয়াতি মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার হয় হাদিস মীর। ঢাকার আদালত হাদিস মীরকে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরু ইসলাম। সেখানেও গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এদিকে অনুসন্ধানে আরও কয়েকজন প্রভাবশালী খলিফার নাম জানাগেছে। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, জাগুয়ার জামাল মেম্বার সহ আরও কয়েকজনের সাথে মাঠ পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা ছিল। হাদিস মীর ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার সুবাদে একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়। যাদের মাধ্যমে নানান সুবিধা গ্রহণ করত তারা। বহু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে গোপনে সখ্যতা করে তাদেরকে কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং নানান কৌশল অপকৌশলে আর্থিক সুবিধা নিতেন হাদিস মীর।

সাংগঠনিক ভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে দুরে ঠেলে দিয়ে আর্থিক সুবিধা লাভের ধান্দায় এই চক্রটি ছিল সদা সক্রিয়। এরা সবসময় নিজের আখের গোছাতে প্রতিমন্ত্রীকে ভুল বুঝানোর চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। সম্প্রতি বড় ধরনের অপরাধ ধরা পড়লে তাৎক্ষনিক ভাবে হাদিস মীরকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রতিমন্ত্রীর পুরানো ঘনিষ্ঠদের দূরে ঠেলে হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসা একটি সিন্ডিকেট সবসময় আঠার মত লেগে থাকার চেষ্টা করতো। আস্তে আস্তে থলের বিড়াল বের হয়ে আসছে। হাদিস মীরের সম পর্যায়ে থাকা আরও কয়েকজন রয়েছেন এই ধরনের সুবিধাবাদীদের তালিকায়। তবে অনুসন্ধান করে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কোন অনিয়মকারীকে প্রশয় না দেয়ার প্রত্যয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

প্রায় ২৫ বছর পূর্বে বরিশালে এসে হাদিস মীরের পরিবার ঘাটি গেড়ে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়ে গেছে। হাদিস মীরের ঘনিষ্ঠজনরা সেই আশায় বুক বাধলেও গ্রেফতারের খবরে কিছুটা পিছু হটেছেন।

জানাযায়, মা এন্টারপ্রাইজ নামে হাদিস মীরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েক গ্রুপের কাজ বিভিন্ন মাধ্যমে বন্টন করা হতো। ঢাকার গুলশানে তার এক প্রতিষ্ঠান ম্যানেজারের সাথে পার্টনারশীপ বিজনিসে বেশ কয়েকটি কাজ নেয়ার খবরও পাওয়া গিয়াছে। এসব বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করলে শূন্য থেকে কোটিপতি হওয়ার কাহিনী আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের সনাক্তে আরও সুবিধা হবে।

হাদিস মীরের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, রিমান্ডে এনে হাদিস মীরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেলেও তা মামলার তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।

হাদিস মীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন খলিফার মধ্যে নয়ন ফরাজী ছিলেন অন্যতম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন ফরাজী বলেন, তিনি হাদিস মীরকে মোটরসাইকেলযোগে ভাড়ায় চালিত চালক হিসাবে ছিলেন। বহুতল ভবন নির্মাণ বিষয়ে তিনি বলেন, তার জমির ব্যবসা রয়েছে। তা থেকে অর্থ উপার্জন করেছেন।

বিএনপি নেতা তুহিন মেম্বারের নিকট ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভি করেননি।

ঘটনার বিষয়ে শহিদুল ইসলাম ওরফে ইটালী শহিদের নিকট জানতে চাইলে তিনি ঠিকাদারী কাজ করার কথা স্বীকার করলেও হাদিস মীরের সাথে এ বিষয়ে তার সংযোগ নেই বলে জানান। তবে তার এ বক্তব্যের যথার্থতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান চলছে।

 

সূত্র: দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল, ২৪/০৬/২০২০ ইং

সর্বশেষ