ভোলা প্রতিনিধি ::: উপজেলা পরিষদ নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে ভোলার লালমোহনের লর্ড হার্ডিঞ্জ ও বদরপুর ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থীর অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর (তালা) কর্মীদের বিরুদ্ধে পরাজিত প্রার্থীর (চশমা) সমর্থকদের পিটিয়ে আহত করা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লালমোহন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও লালমোহন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, যাঁরা মারছেন এবং মার খাচ্ছেন, নির্বাচনের পরে কারও সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। তিনি থানা–পুলিশকে বলেছেন, যে–ই সন্ত্রাসী কাজ করবেন, তাঁকে ধরে জেলে ভরতে। লর্ড হার্ডিঞ্জে সহিংসতা হচ্ছে লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিনের বিরোধের কারণে। জসিম ওই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চান আর বদরপুরে সহিংসতা হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধের কারণে। তাঁরা পরাজয়ের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
ভোলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালমোহন সার্কেল) বাবুল আক্তার বলেন, সহিংসতার খবর শুনে লর্ড হার্ডিঞ্জ ও বদরপুরে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
৯ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৫ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আক্তারুজ্জামান (দোয়াত কলম)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আক্তার হোসেন (শালিক)।
লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, চশমার সমর্থন করায় তিনি নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের বাহিনী তাঁকে খুঁজছে। যাঁরাই চশমা প্রতীকের সমর্থন করেছেন, তাঁকেই মারধর করছে।
ইউপি সদস্য, চশমা প্রতীকের একাধিক কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন–পরবর্তী সময় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির ওপর হামলা করেছেন চেয়ারম্যানের লোকজন। ফলাফল ঘোষণার পর গত রোববার রাতে চেয়ারম্যান বাহিনীর সদস্য মো. জুয়েল, মো. শাহিন, শরীফুল ইসলাম, আলী মাঝি, মোশারেফ হোসেন, রাকিব, সবুজসহ ৫০-৬০ জনের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তায়, বাজার ও মাছঘাটে মহড়া দিচ্ছেন। যাঁরাই চশমা প্রতীককে সমর্থন করেছেন, তাঁকেই মারধর করছেন। চাঁদ মিঞার বাজার এলাকার সরকারি আবাসনে বসবাস করেন হেলালউদ্দিন, জসিম মাঝি, সৈলান মাঝিসহ ৪-৫ জনকে খুঁজতে যান। তাঁদের ঘরে না পেয়ে ঘরগুলো ভাঙচুর করেন। ওই বাজারের এক ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙচুর করেন। তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা, ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ফাঁকা আওয়াজ করে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। ভোটের পরে ইউনিয়নের বুড়িরদোন, চোরার খাল, কাশমির বাজার, ইউপি এলাকার কমপক্ষে ২৫ জন চশমার সমর্থককে চড়থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মেরে আহত করেছেন। পরে লালমোহন থানাকে জানালে পুলিশ এসে এখন টহল দিচ্ছে।
তবে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁর সুনাম নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদ উল্লাহ মেলকার বলেন, তিনি চশমা প্রতীকের সমর্থক ছিলেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পরে তালা ও মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থক ফরহাদ মেলকার, নোমান মেলকার, শহিদুল মেলকার, সজিব মেলকারের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মহড়া দিচ্ছেন। বিভিন্নজনকে মারধর করছেন, নির্বাচনে হেরে ভোটারদের কাছে চাঁদা দাবি করছেন। ফল ঘোষণার পর রোববার রাতে এ বাহিনী তাঁদের (চেয়ারম্যান) বাড়িতে হামলা করে তাঁর ভাই ফরহাদের ঘর ভাঙচুর করেছে। তাঁর মায়ের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। টানাহেঁচড়া করেছে। তাঁর আহত বৃদ্ধ মাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
তবে তালা প্রতীকের কর্মী ফরহাদ মেলকার তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান বাহিনী রোববার রাতে ফল প্রকাশের আগে বিজয় মিছিল বের করে তালার কর্মীদের মারধর করেছে।