২রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

শেবাচিমে শিক্ষাণবিশ নার্সের ভুলে প্রাণ গেল বৃদ্ধা রোগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে শিক্ষাণবিশ নার্সের ভুলে মনোয়ারা বেগম নামের এক বৃদ্ধা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্যালাইনের মাধ্যমে দেয়া ইনজেকশন সারাসরি শিরায় পুশ করার সাথে সাথে নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের তৃতীয় তলায় মেডিসিন ইউনিট-৩ ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে।
মৃত মনোয়ারা বেগম (৭০) পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার নয়াভাঙ্গলী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ চৌকিদারের স্ত্রী।

অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেডিসিন-৩ ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ জুবায়ের হোসেন। তবে এ ধরনের কোন অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।

মৃতের ছেলে সেন্টু চৌকিদার জানান, পেটে ব্যাথা নিয়ে গত বুধবার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৩ এর মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় মনোয়ারা বেগমকে। গত চার দিনের চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। সোমবার সকালেও পরিবারের সদস্যদের সাথে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন তিনি। ইচ্ছে ছিল মঙ্গলবার তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার।

তিনি বলেন, সকাল ৯টার দিকে একজন নার্স এসে রোগীর শিরায় কে.টি নামক ইনজেকশন পুশ করে। এরপর মুহূর্তেই নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ডলে পড়েন মা। দ্রুত চিকিৎসককে ডাকা হলে তারা এসে সকাল সাড়ে ৯ টায় মাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

সেন্টু চৌকিদার বলেন, ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রিতা ইনজেকশন সিরিঞ্জে ভরে রোগীর শরীরে পুশ করার জন্য শিক্ষাণবিশ (ইন্টার্ন) নার্স শায়েলা আক্তার বর্নাকে বলেন। বর্না রোগীর শিরায় ইনজেকশন পুশ করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মা। ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ জুবায়ের হোসেনকে অভিযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আমাদের শান্তনা দিয়ে পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ জুবায়ের হোসেন বলেন, কয়েকজন স্বজন এমন অভিযোগ নিয়ে আসছিলেন। এখানে ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের কোন অবহেলা ছিল না। কে.টি নামক ইনজেকশনটি শরীরের পটাশিয়াম বা লবন পুরণ করে। ওই রোগীর শরীরে পটাশিয়ামের প্রচুর ঘাটতি ছিল। এজন্য তাকে কয়েকদিন ধরে ওই ইনজেকশনটি দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তিনি বলেন, ‘ইনজেকশন কে.টি স্যালাইনের সঙ্গে মিশিয়ে সল্পগতিতে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। আমরা ব্যবস্থাপত্রে সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু শুনেছি শিক্ষাণবিশ নার্স স্যালাইনে না মিশিয়ে সরাসরি রোগীর শিরায় পুশ করেছে। এ জন্য রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছি। কী ঘটেছিল, কার কারণে ঘটেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রিতা বলেন, ‘সকালে আমি ইনজেকশন রেডি করে ইন্টার্ন নার্স বর্নার হাতে তুলে দিয়ে রোগীর স্যালাইনে মিশিয়ে দিতে বলেছি। কিন্তু সেটা না করে বর্না সরাসরি রোগীর শিরায় পুশ করেছে। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এটা ওই ইন্টার্নের অসাবধানতার কারণে হতে পারে।

এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে কেউ নিয়ে আসেনি। স্বজনরা এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সর্বশেষ