কাওসার হামিদ,তালতলী(বরগুনা) প্রতিনিধি
আর মাত্র ১দিন বাকি। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামীকাল ৪ নভেম্বর রাত ১২টার পর থেকে ইলিশ শিকার করতে পারবে জেলেরা। সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে বরগুনা উপকূলের প্রায় ৩৬ হাজার জেলে। জেলে পল্লীর এই ২২ দিনে মাত্র ২০ কেজি চাল দিয়ে চলছিলো তাদের সংসার। পল্লী গুলোতে জেলেদের পরিবারগুলো এই ২২ দিন অভাব-অনাটনের মধ্যে দিন কেটেছে। সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ শিকার না করে দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটিয়েছে জেলেরা।
জেলা মৎর্স অফিস সূত্রে জানা যায়, বরগুনা জেলায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার সময় নিবন্ধিত ৩৬ হাজার ২৫৪ জন জেলেকে জনপ্রতি ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে সব জেলেরা মাছ শিকার করছে তাদের অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্ট এর আওতায় আনা হয়েছে। এ জেলায় ৫ জনকে ৭ দিন করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার।
২২ দিন অপেক্ষার পরে বরগুনারসহ উপজেলায় জেলার বিভিন্ন ঘাট থেকে মাছ শিকারের উদ্দেশে সাগরে যাত্রা শুরু করবে জেলেরা। মৎস্য কেন্দ্র তালতলীর ফকিরহাট গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বাজারসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন শেষ, আগামীকাল সকাল হলেই তারা ট্রলারে বরফ ভরে সাগরে যাত্রা শুরু করবে।
মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) মঙ্গলবার বিকেলে উপকূলের ফিশারি ঘাট গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, নদীর মোহনায় নোঙর করা আছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার। সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছ শিকারে যায়নি এসব ট্রলার। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছিলো জেলে পরিবারগুলো। সরকারি নিষেধাজ্ঞার দিন শেষ হওয়ায় ফের সাগরে জাল ফেলার অপেক্ষায় খোশ মেজাজে রয়েছে এ উপকূলের জেলেরা। এখন তারা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে জেলেরা নিজ নিজ ট্রলারে জাল ও মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে ধার-দেনা করে। স্থানীয় মুদি দোকান থেকে চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরিমান মতই বরফ নিয়ে সংরক্ষণ করে রাখছে ট্রলারে । তবে ২২ দিন পরে সাগরে ও নদীতে ইলিশ শিকার করতে পারবে এতে জেলে পল্লীগুলোতে আনন্দের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
নিদ্রা(তালতলী) জেলো পল্লীর মোতালেব, সোহাগ আকন ,রশিদ হাওলাদারসহ একাধিক জেলে বলেন, দীর্ঘ ২২দিনে মাত্র ২০ কেজি চাল পেয়েছি এতে আমাদের পরিবারগুলোর চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু সেই কষ্ট আর কষ্ট মনে হয়না এখন। আগামীকাল সাগরে যেতে পারবো। এজন্য ধার-দেনা করে যাবতীয় বাজার সদায় করে ট্রলারে রাখা হয়েছে।
ফকিরহাট এলাকার ট্রলার মালিক রাজা মাস্টার বলেন, ট্রলারে ২৫ জন জেলেকে ৭ দিনের মাছ ধরতে পাঠাবো আগামীকাল। এতে প্রায় ২ লাখ টাকার খাদ্য, তেল, জালসহ নানা সরঞ্জাম ট্রলারে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধের পর যখন সাগরে জেলেদের পাঠাচ্ছি, তখন মনে একটু ভয় হচ্ছে। কারণ, জলদস্যুরা আক্রমণ করতে পারে। তবে জলদস্যু রোধে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করছে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মস্তফা চৌধুরী ংবলেন, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য জেলায় ২ হাজারের অধিক ট্রলার ও ৩০ হাজার জেলে প্রস্তুত। সাগরে জেলেরা জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবুও নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে জলদস্যুতা রোধে কঠোর ভূমিকা পালন করছে।
জলদস্যুদের থেকে জেলেদের নিরাপত্তা বিষয়ে কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা জোনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মেহেদী হাসান বলেন, নদীতে আমাদের সব সময় টহল থাকে। জেলেদের প্রতিনিধিদের কাছে আমাদের নাম্বার আছে ২৪ ঘন্টাই তারা আমাদের কাছে যোগাযোগ করতে পারে। যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।