১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সাদাসিধে মানুষ বর্ষিয়ান রাজনীতিক বাকেরগঞ্জের আবু হাওলাদার

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অলিউল্লাহ তুষার:

আবুল কালাম আজাদ । সমাজে তিনি আবু হাওলাদার নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৫৮ সালের ১০ই মে বাকেরগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপাশা ইউনিয়নের জিরাইল গ্রামে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আজিজ হাওলাদার ছিলেন সমাজের একজন গন্যমান্য ব্যাক্তিত্ব, মা সোনা বানু বিবি জ্ঞানী নারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন।
শিক্ষা জীবনে কাকরধা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই তার মনে দেশের প্রতি অসীম ভালোবাসা ছিল। ছাত্রজীবনে নিজ মাতৃভূমির উন্নয়নের জন্য রাজনীতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে পলিটেকনিক ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পড়াশুনা শেষে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিদেশে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি যায়নি, দেশ ও মায়ের প্রতি ভালোবাসায় ফিরে গেছেন নিজ গ্রামে। শিশুদের প্রাপ্য শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন “পশ্চিম জিরাইল আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়”। ১৯৯১ সালে তিনি এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন এবং বাকেরগঞ্জ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন । একই সাথে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি বরিশাল জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির দীর্ঘদিন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের লক্ষ্যে ৬৪টি জেলায় গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠিত করেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করনের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন।

এই দাবি নিয়ে একাধিকবার তার রাজনৈতিক গুরু ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন এবং স্মারকলিপি প্রদান করেন।২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন।তার স্বচ্ছ নেতৃত্বের গুনে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে সবসময় চেষ্টা করেছেন।বহু ঝগড়া, মারামারির সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। সম্ভাব্য মারামারি, হানাহানি থেকে মানুষকে দূরে রেখেছেন। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার বৃদ্ধি করে সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন জিরাইল আজিজিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা। এছাড়া যাদের এ দুনিয়ায় আপন বলে কেউ নেই আল্লাহ তায়া’লার ইচ্ছায় সেসব মানুষদের পাশে ছিলেন আবু হাওলাদার। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জিরাইল গরীব নেওয়াজ এতিম খানা৷যেখান থেকে অনেকেই এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যাংকার সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।তার নিজ এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বহু রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট ও ব্রিজ স্থাপন করেছেন৷বিদ্যুৎ সংযোগে ভূমিকা রেখেছেন প্রচুর গাছ লাগিয়েছেন।অনেক অসহায় মানুষদের সাহায্য করে তাদের পুনরায় সাবলম্বী করে তুলেছেন।সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন, শিশু শ্রম, যৌতুক ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধি নিরসনে কাজ করে গেছেন।সকল মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দল, মত, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে কাজ করেছেন।

ছাত্রজীবনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ইউনুস খানের হাত ধরে রাজনীতিতে যোগদান করেন তিনি। প্রায়াত রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস ছিলেন তার রাজনৈতিক গুরু। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপি যোগ দেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে খাল কাটা সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন তিনি। পরবর্তীতে নিজ উপজেলা বাকেরগঞ্জের যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।পরবর্তীতে দূর্গাপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বরিশাল জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।রাজনৈতিক জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাকে।তিনি রাজনৈতিক দল, ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন৷আজও তিনি বাকেরগঞ্জ এলাকার রাজনৈতিক অভিবাবক হিসেবে গন্য। প্রতিবার রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন নির্বাচন করার জন্য তাকে অনুরোধ করলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন কেননা রাজনীতিতে যুক্ত হবার সময় তিনি তার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন শুধুমাত্র সমাজের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করবেন নির্বাচনে জড়াবেন না, যেন কেউ কখনো তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে৷ বাস্তব জীবনেও যে মহানায়করা থাকেন তার একটি নজির দেখা যায় আবুল কালাম আজাদে (আবু হাওলাদার) এর জীবনী দেখলে। তার প্রায়ই ব্যাবহৃত দু একটি উক্তি নিচে তুলে ধরা হলো যার থেকে শিক্ষনীয় রয়েছে অনেক।
” পরের দোষ গোঁজো, নিজের দোষ খোঁজো”
” কাজের নাম কর”
” নিজে ভালো তো জগৎ ভালো”

সর্বশেষ