১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সেই মোটরসাইকেলেই মাকে নিয়ে বাড়িতে গেলেন ব্যাংক কর্মকর্তা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক :: অক্সিজেন সেচুরেশন লেভেলসহ সার্বিক সব কিছু আগের মতো ঠিক ঠাক থাকায় মাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে গেলেন সেই ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান। আজ শুক্রবরা (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিজের মাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করেই বাড়িতে ফিরে এসেছেন।

 

ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান জানান, বাড়িতে ফিরে তার মা দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করে ওযু করে নামাজ পরেছেন, খাবারও ঠিকভাবে খেতে পেরেছেন। তাকে নিজের ঘরে হাটাচলা করতে দেখে নিজের কাছেই আজ খুব ভালো লাগছে।

 

এদিকে কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠি সদর শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান তার ফেসবুক আইডি থেকেও একটি পোষ্ট দিয়েছেন, যেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করেছেন। তার সেই লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তলে ধরা হলো—

‘এ বিজয় অদ্যাবধি জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয়।’

৬ দিন মুমূর্ষু মা-কে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রেখে পুরোপুরি সুস্থ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আলহামদুলিল­াহ!’

 

অক্সিজেন সেচুরেশন ৭০ অবস্থায় মা-কে বাচাঁনোর নিমিত্তে নিজ শরীরে ৮ লিটার মাত্রার চলমান ২০ কেজি ওজনের অক্সিজেন সিলিন্ডার বেধে যে বাইকে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম, আজ মমতাময়ী মা তার ফুসফুসে অক্সিজেন সেচুরেশন ৯৬ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে সেই বাইকে করেই। এ যেন আল্লাহর নেয়ামত।

 

সমগ্র দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাদের আন্তরিক দোয়ায় আমার মাকে মহান আল্লাহ এ যাত্রায় সুস্থ করে দিলেন।

 

উল্লেখ্য, নিজের শরীরের সঙ্গে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে নিজের মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন জিয়াউল হাসান নামের ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।

বরিশালে আসার তখন তিনি জানিয়েছিলেন, কোনো উপায় না পেয়ে মাকে এভাবে অক্সিজেন দিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার বাড়ি থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয় তাকে।

 

জিয়াউল হাসানের মা রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। মায়ের শরীরে জ্বর দেখা দিলে ৯ এপ্রিল প্রথম করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন নলছিটিতে। কিন্তু বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও তার রিপোর্ট না আসায় ১৫ এপ্রিল শেবাচিম হাসপাতালে পুনরায় নমুনা দেন এবং ১৭ এপ্রিল অক্সিজেন সেচুরেশন লেভেল কমতে থাকলে কোন উপায়অন্ত না দেখে মাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চেপে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ শেবাচিম হাসপাতালে আসেন জিয়াউল হাসান।তখন তার পাশে অপর মোটরসাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিবুল হাসানও আসেন। এরপর এই দুইভাই শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে থেকে মায়ের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যান। যদিও এরমাঝেই হাসপাতালের নীচতলায় রাখা জিয়াউল হাসানের মোটরসাইকেলের ওপর থেকে কালো হেলমেটটি চুরি হয়ে যায়।

 

জিয়াউল হাসান বলেন, ৯ ও ১৫ এপ্রিলের রিপোর্ট ১৭ এপ্রিল রাতে পরপর দুটি আলাদা ম্যাসেজে জানতে পারি। যেখানে ৯ তারিখের রিপোর্টেই মা করোনা পজেটিভ ছিলেন। সেই হিসেবে ১৪ দিনের বেশি হয়ে গেছে তার আক্রান্তের সময়। চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখে যখন তাকে সুস্থ মনে হয়েছে তখনই তাকে নিয়ে বাসায় এসেছি। কাল হয়তো আবার নমুনা পরীক্ষা দিবো। তবে মা এখন পুরোই স্বাভাবিক রয়েছেন।

সর্বশেষ