পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: মো. নজরুল ইসলাম। পেশায় ট্রলার মাঝি। নজির মাঝি নামেই চেনে সবাই। তার বয়স ৬৪ বছর। এখন আর নিয়মিত সমুদ্রে যান না। বদলি মাঝি হিসেবে মাঝে মধ্যে ট্রলারের হাল ধরেন।
গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এফবি আল-হাসান নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যান। পটুয়াখালীর মৎস্য বন্দর মহিপুরের মেসার্স মনোয়ারা ফিস ঘাট থেকে গভীর সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গী ছিলেন আরও ১৭ জন জেলে।
সমুদ্রে মাছ শিকার করা অবস্থায় ৮ দিনের মাথায় ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়। ভাসতে ভাসতে গভীর সমুদ্রে চলে যায় ট্রলারটি। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সবাই। অবশেষে ৩২ দিন পর নৌবাহিনীর সাহায্যে বেঁচে ফিরে আসেন তীরে।
নজির মাঝির বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের মম্বিপাড়া গ্রামে। তার ফিরে আসার খবর শুনে সরেজমিনে কথা হয় এ প্রতিনিধির সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘৮ দিনে প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ধরছিলাম। মাছ ধরা অবস্থায় গত ১৭ ডিসেম্বর হঠাৎ ট্রলার ইঞ্জিন নষ্ট হয়। এরপর শত চেষ্টা করেও আর ইঞ্জিন ঠিক করা সম্ভব হয়নি। সাগরে ভাসতে ছিলাম। ট্রলার ভাসতে ভাসতে গভীর সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে। গেরাপি মেরে ট্রলার থামানো যাচ্ছে না। ট্রলারের বাজার সদায়, জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিও লবণ। তাই খাবার পানির জন্য ট্রলারে থাকা বরফ পানির ১২টি ড্রামে ভর্তি করি। তাতে ৪ ড্রাম পানি হয়েছে। বরফ গলা পানি পান করছি আমরা। শিকার করা মাছ আগুনে পুড়ে খাইছি। যখন জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে তখন মাছ কেটে রোদে শুকিয়ে শুকনা মাছ খেয়েছি। এভাবেই দিন-রাত কেটেছে।’
তিনি বলেন, ট্রলার আস্তে আস্তে গভীর সমুদ্রে আড়াইশ বাম পানিতে চলে যায়। আমরা সবাই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এত গভীর সমুদ্রে কোনো ট্রলার বা জাহাজ আসার কথা না। হঠাৎ ২৭ দিনের মাথায় দূর থেকে একটি জাহাজ দেখতে পাই। কিন্তু জাহাজ আমাদের দেখেনি। অন্যত্র চলে গেছে। ঠিক এর পরদিন একটি জাহাজ আমাদের ট্রলার দেখে কাছে আসে এবং আমাদের খাবার দেয়।
তারপর অন্য একটি জাহাজে খবর দিয়ে আমাদের ২০ ঘণ্টা টেনে সেন্টমার্টিনে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের সকলের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেন। পরের দিন আসরের পর অন্য একটি ট্রলারে বেঁধে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়।