১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় বরিশাল সরকারি মডেল স্কুলের ৬১ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরিশাল বাণী : বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের একটি আদেশে প্রতিষ্ঠানটির ৬১ শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মে মাস থেকে বেতন বন্ধ। মে মাস থেকে বেতন বন্ধ হওয়ায় ৬১ শিক্ষক ও কর্মচারিদের পরিবারে চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশা দেখা দিয়েছে ।

১৭ মে’২০২০ তারিখ বেতন বন্ধের অধ্যক্ষের অবৈধ আদেশ প্রত্যাহারের জন্য ২১ জন খন্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মচারীরা পৃথক পৃথক আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের নিকট। ১৭ মে বৈশ্বিক মহামারি করোনা চলাকালীন সময়ে নিয়মিত বেতন প্রদান শিরোনামে তারা আবেদন করেন।

এবার ১১ জুন বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৪০ জন স্থায়ী শিক্ষক ,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে বেতন ভাতা সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী অাত্তীকরন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখার শিরোনামে আবেদন করেন।

আবেদনে এ ৪০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন উল্লেখ করেন মে’২০২০ মাসের বেতন ভাতা জুনের ১০ তারিখ পর্যন্ত পাইনি। এ বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে ৩ জুন আলোচনা করলে তিনি জানান কোন বেতন দেয়া হবেনা। কারন হিসিবে তিনি বলেন ফান্ডে কোন টাকা নাই। আবার বলেন,সরকার শুধু এপ্রিল ও মে মাসের মুল বেতন দিতে বলেছে। কলেজের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ফান্ড ও তিন কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যে নির্দেশনা রয়েছে তা সদ্য বা নতুন সরকারিকরনকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নন এমপিও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় আত্তীকরন না হওয়া পর্যন্ত পুর্বের ন্যায় বেতন ভাতা আমাদের অব্যাহত থাকবে। নিয়মিত বেতন ভাতা পরিচালনা পর্ষদ অব্যাহত রাখবেন এ মর্মে নির্দেশনা রয়েছে।
৪০ জন আবেদনকারী অধ্যক্ষ প্রসঙ্গে আবেদনে উল্লেখ করেন,পরিতাপের বিষয় এই করোনা দুর্যোগ মুহুর্তে প্রতিষ্ঠানটির প্রেষনে নিয়োজিত অধ্যক্ষ করোনার অজুহাতে সু কৌশলে পরিচালনা পর্ষদের কোন সভা আহবান না করে একক সিদ্ধান্তে বেতন দেওয়ার দীর্ঘ সূত্রতা সৃষ্টি করছে।অথচ অধ্যক্ষ তার মুল বেতনসহ অন্যান্য ভাতাদি কলেজ ফান্ড থেকে গ্রহন করছেন। তারা আবেদনে আরো উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ যোগদানের তারিখ থেকে শতকরা বিশ ভাগ প্রেষন ভাতা গ্রহন করে আসছেন যা মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শিক্ষক ও কর্মচারিরা বেতন ভাতা না পাওয়ায় তারা বেতন বন্ধের আদেশকে অন্যায় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সভাপতির নিকট মে মাসের বেতন ও এডহক না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত বেতন ভাতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।

আবেদনের সতত্য নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির সহকারি অধ্যাপক (গনিত) মোঃ আবু মামুন বলেন,আমরা এখন পর্যন্ত মে মাসের বেতন পাইনি। অধ্যক্ষকে বলা হলেও তিনি বেতন দিবেনা এজন্য আমরা ১১ জুন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির নিকট বেতন নিয়মিত দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ৪০ জন স্থায়ী শিক্ষক , কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আবেদন করেছি।বেতন না দেয়াকে তিনি অমানবিক বিষয় উল্লেখ করে বলেন ফান্ডে টাকা রয়েছে। অথচ অধ্যক্ষের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারনে ৬১ জনের আজ বেতন বন্ধ এই করোনা মহামারি দুর্যোগে যা চরম দুঃখজনক।

মে মাসের বেতন আজ ১৩ জুন পর্যন্ত দেয়া হয়নি বলে জানারেন প্রতিষ্ঠানটির হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ আমির হোসেন। এছাড়া মে মাসের বেতন এখনো পায়নি জানালেন প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তারক্ষী মামুন হোসেন মৃধা।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান,বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে এক সময়ের বরিশালের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় প্রতিষ্ঠানটি সভাপতি হলে ও সভাপতি ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই একক ভাবে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ। এমনকি সভাপতি ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ও না মানার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। প্রথমে খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করার পরে এবার একক সিদ্ধান্তে বন্ধ করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৪০ জন স্থায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন।

এদিকে প্রতিষ্ঠারটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবরে খন্ডকালীন ১৩ শিক্ষক স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয় আমরা বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড করেজে কর্মরত আছি। বর্তমান সময় গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস নামক এক ভয়ংকর মহামারির কবলে।। যেখানে দীর্ঘ মৃত্যুর মিছিল ও ঘরবন্ধি মানুষ অসহায় বাবে জিবন যাপন করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও প্রশাসন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পরিস্কার নির্দেশনা দিয়েছেন যে,সকল প্রতিষ্ঠানকে তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদান করতে। সেখানে আমাদেরকে মে’২০২০ সাল থেকে বেতন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী শিক্ষক ও কর্মচারিরা বেতন পাবেন নিয়মিত। স্থায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঈদে বেতন বোনাস সহ অর্ধ লাখ থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছে। সেখানে খন্ডকালীন ও আমন্ত্রিত শিক্ষকদের মাত্র মাসিক আট হাজার টাকা বন্ধের স্বিদ্ধান্ত দেয়া একটি অমানবিক স্বিদ্ধান্ত। আবেদনকারী শিক্ষকদের এই আট হাজার টাকা ছাড়া অন্য কোন আয়ের উতৎ নেই।বর্তমানে এ বেতন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুদর্শায় ও না খেয়ে দিন যাপন করতে হবে বরে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। সকল প্রেক্ষাপট, পরিবার ও পরিজনদেরকথা বিবেচনায় বেতন নিয়মিত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সভাপতির নিকট আবেদন করেন।

সর্বশেষ