১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমতলীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, তলিয়ে গেছে ভেরীবাঁধের বাহিরে ঘরবাড়ী

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলীতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার পায়রা নদীসহ সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে এ দু’উপজেলার ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত হাজার হাজার ঘরবাড়ী। বিকেলের জোয়ারে নদ-নদীতে আরো বেশী পানি বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করছেন স্থাণীয়রা।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ (বুধবার) সকাল থেকে পায়রা নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। বড়বড় ঢেউ তীরে আছরে পড়ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেরীবাঁধের উচ্চতা ছুইছুই করছে। আমতলী ও তালতলী উপজেলার বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, লোচা, নয়াভেঙ্গুলী, ফেরীঘাট, লঞ্চঘাট, আমুয়ারচর, বৈঠাকাটা, আঙ্গুলকাটা, নাইয়াপাড়া, ফকিরহাট, জয়ালভাঙ্গা, গাবতলী, মৌপাড়া, তুলাতলী, বগী, পচাঁকোড়ালিয়া এলাকায় ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত কয়েক হাজার পরিবারের বসত বাড়ীতে জোয়ারের পানি উঠে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার লোকজন ভেরীবাঁধের উচু স্থানে ও কাছাকাছি সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানাগেছে। স্থাণীয়রা আশংকা করছেন রাতের জোয়ারে নদ- নদীতে পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে আজ সকালে বরগুনার প্রধান তিনটি নদীসহ ছোটবড় নদীতে চেয়ে যেটুকু পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অনেক বেশী। সকাল ৯টায় তিনটি নদী (পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর) জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল ২.৮৫ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার সমান সমান। এর এক ঘন্টা পরে এই নদীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ৩.১০ সেন্টিমিটার হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মোঃ মাহাতাব হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বরগুনার তিনটি প্রধান নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়োরের চেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারনে রাতের জোয়ারে নদীতে আরো বেশী পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমতলী ফেরীঘাট এলাকার বাসিন্ধা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারনে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফেরীঘাটের গ্যাংওয়েসহ ওয়াবদা ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত এখানকার শতাধিক পরিবারের বসত ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

তালতলীর জয়ালভাঙ্গা এলাকার মাঝি আবুল কাশেম বলেন, পায়রা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেরীবাঁধের উচ্চতা ছুই ছুই করছে। নদীতে প্রচন্ড ঢেউ শুরু হয়েছে। রাতের জোয়ারে এর চেয়ে যদি বেশী পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে তা লোকালয়ে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত কয়েক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ীতে পানি উঠে গেছে। তারা এখন উচু স্থানে ও কাছাকাছি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত আমতলী উপজেলার গুলিশাখালীর নাইয়াপাড়ার জেলে আবুল হোসেন বলেন, আমরা ভেরীবাঁধের বাহিরে প্রায় ৩০০টি জেলে পরিবার বসবাস করি। প্রতিটি প্রাকৃতিক দূযোর্গে আমাদের আতংকে থাকতে হয়। নদীতে পানি পাড়লে আমাদের বাড়ী-ঘর তলিয়ে যায়। আমাদের এখানে কোন সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় প্রতিটি প্রাকৃতিক দূর্যোগে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ীঘর ফেলে দূরে গুলিশাখালী হাই স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত সকল পরিবারকে বাধ্যতামূলক সংশ্লিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে। যদি কোন পরিবার আসতে না চায় তাদেরকে পুলিশ দিয়ে ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরতদের আশ্রয় কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তারা যদি না আসে ত্হলে তাদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আসা হবে। আর সাইক্লোন সেল্টার আশ্রয় নেয়াদের জন্য শুকনো খাবার, সেহেরী, ইফতারী ও বিশুদ্ধ খাবার পানি, মাস্ক ও হাত ধোয়ার জন্য সাবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সর্বশেষ