ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বরগুনায় বুধবার (২০ মে) সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। কখনও কখনও আবার মেঘের বুক চিরে উঁকি দেয় সূর্য।
বরগুনার কেজি স্কুল রোডের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনার আবহাওয়ায় নানা নাটকীয়তা দেখা দিয়েছে। কখনও বৃষ্টি পড়ছে আবার কখনও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আবার কখনও বৃষ্টি-বাতাস থেমে আকাশে সূর্য দেখা দেয়।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সুন্দরবনের কাছ দিয়ে বুধবার (২০ মে) বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি ইতোমধ্যে উপকূলের সাড়ে তিনশ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। ফলে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ১০ থেকে ১৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা বলেশ্বর ও বিষখালীতে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে পানি বেড়েছে কয়েকগুণ।
নদীতীরের বাসিন্দারা বলছেন, নদীতে ইতোমধ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ৬ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরের বাড়িঘর।
বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনার প্রধান তিনটি নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে বরগুনার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার রয়েছে। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর আগেই আমাদের সতর্ক করেছে। জেলায় আটশ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল, যা আমরা মেরামত করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন বলেন, বরগুনার প্রধান তিনটি নদীতে জোয়ারের উচ্চতা ইতোমধ্যে বৃদ্ধি পাওয়ার খবর আমি পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার খবর পাইনি।