বরগুনা প্রতিনিধি :: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা রাতের জোয়ারে সাড়ে ১১ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার ৬ টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে সেসব এলাকার ঘরবাড়ি এবং মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনা বাদাম এবং ভুট্টার ক্ষেতসহ শত শত সবজির বাগান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরগুনা জেলা শাসকের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষনিকভাবে প্রস্তুতকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তুলে ধরেন উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে।
এ সময় বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জেলার ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৮০০ বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩.৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১২১টি মাছের ঘের এবং ১০টি চিংড়ির ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫০ হেক্টর ফসলের ক্ষেত এবং ৫০ হেক্টর সব্জির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়াও ১৫টি মুরগীর এবং ১৯টি গরুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, জোয়ারের তীব্রতায় প্লাবিত হয়ে বরগুনা শহরের অনেক ধান চালের আরৎ, ইলেকট্রনিক্সের দোকান, ওষুধের দোকান, কাপড়ের দোকান এবং কসমেটিকসের দোকানসহ অনেক দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে লাখ লাখ টাকার মালামাল।
ভুক্তভোগী একাধিক এলাকাবাসী জানান, ঝড়ের তীব্রতা যখন চরমে ঠিক তখনই প্রাকৃতিক নিয়মে ভাটা শুরু হয়ে যায় যার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় বরগুনা সহ আশেপাশের উপকূলীয় এলাকা। জোয়ারের তীব্রতা আরো ঘণ্টাখানেক সময় ধরে অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ শতগুণ বেড়ে যেত।
তারপরেও সাড়ে ১১ ফিট উঁচু জোয়ারের তীব্রতায় বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িররচর, ছোট লবনগোলা, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের গাববাড়িয়া, তাফালবাড়িয়া, কাঠালতলী ইউনিয়নের পরীঘাটা এবং সদর পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জ্বিনতলা, বেড়িবাঁধ ভেঙে অতি জোয়ারের পানিতে আশেপাশের গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও বামনা উপজেলা রামনা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, পূর্ব সফিপুর এবং বামনা লঞ্চঘাট, অযোদ্ধা, কলাছিয়া
বড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী জানান, তার ইউনিয়নে ১০ থেকে ১৫ টি ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি। এ ছাড়া যেসব মৎস্যজীবি ট্রলার ঘাটে বাঁধা ছিল তার অধিকাংশই জোয়ারের পানির তীব্রতায় এবং উত্তাল ঢেউয়ের কারণে তলিয়ে গেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বুধবার রাতে বরগুনায় সাড়ে এগারো ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমেও গেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই জেলাব্যাপী বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে তা সচল হয়।