২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
উজিরপুরে মাদকসহ জেলা ডিবি'র খাচায় ১ মাদক কারবারী আটক রাজাপুরে নিখোজ ভ্যান চালকের লাশ ভাসছিলো নদীতে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মা ও ভাইকে মারধরের অভিযোগ।। আমতলীর আঠারোগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক নির্বাচন সম্পন্ন। পিরোজপুরে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শুভেচ্ছায় ভাসছেন মুসলিম দম্পতি ফেক আইডির প্রেমের টানে তালতলীতে এসে প্রতারিত আখাউড়ার যুবক দুমকিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কোটি টাকা লোপাট, স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার বানারীপাড়ায় সিএনজি দূর্ঘটনায় চালক নিহত: ৫ যাত্রী আহত সদর উপজেলার প্রতিটি মানুষ আমার কাছে সমান : এসএম জাকির পাথরঘাটায় বন্য শূকরের আক্রমণে নারীসহ আহত ৫

আর কত খুচরা চালাকি করবেন আপনারা?

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মারুফ কামাল খান: এত খারাপ সময়েও আমাদের এ দেশটায় রাজনীতির নামে খুচরা চালাকিগুলো গেলো না।
এখনকার প্রধান খুচরা চালাকি হলো কোনো একটা কাঁধ খুঁজে বের করে সব ব্যর্থতার দায়ভার সে কাঁধের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মহামান্য সরকারকে দায়মুক্ত করা।

আগে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি ভণ্ডুল করা কিংবা এর দায় চাপিয়ে প্রচারণা এবং হামলা-মামলায় তাদেরকে জেরবার করারও চল ছিল। এগুলো ছিল করোনাকালের আগেকার খুচরা চালাকি।
করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করে অনেকেই কথা বলেছেন। কী কী করা উচিৎ এবং উচিৎ নয়, সে পরামর্শও দেয়া হয়েছে। কারুর কথাই কানে তোলেনি সরকার। অবশ্য কারো কাছে পরামর্শ চায়নি তারা, কাউকে ডেকে বলেনি, বলুন দেখি কী করা উচিৎ?

এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত মহামারির দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো কঠিন। এটি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যর্থতা ও লেজেগোবরে দশার জন্য তাহলে কার ওপর দায় চাপানো যায়?
সাধারণ ছুটি দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলবেন কিন্তু খুলে রাখবেন গণপরিবহন। ঘাটে, ইস্টিশনে, টার্মিনালে লোক উপচে পড়বে। ভিড়ভাট্টায় গাদাগাদি করে লোক যাবে-আসবে। সেই চিত্র দেখিয়ে বলবেন, যে-দেশে মানুষ এমন গরু-ছাগলের মতন বোধ-বুদ্ধিহীন সেখানে সরকার কী করবে? কাজেই দায়ী চেতনাহীন এই আম-জনতা।

খুব নাজুক সময়টাতেই বিদেশী-প্রবাসীদের আসা-যাওয়া, বিমান চলাচল অনেক সময় ধরে অবাধ করে রাখবেন, বন্দরে-প্রবেশপথে তাদের পরীক্ষা করার এবং নির্দিষ্ট সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করে রাখার তেমন বন্দোবস্ত থাকবে না, নিজ নিজ বাড়ি গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিবেন আর বলবেন, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল? সেই সাথে দেশে ফেরত প্রবাসীদের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে তাদেরকে নবাবজাদা বলে ভর্ৎসনা করবেন, বাঃ কী চমৎকার!

করোনাঝুঁকির সময় আতশবাসির আলোকোৎসব করবেন, ভোট করবেন, খুব কনফিডেন্টলি বলবেন, করোনা এদিকে আসবে না, বলবেন, আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী, বলবেন, চীনের চেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল বানাবেন, বলবেন, দুনিয়ায় যে-কোনো দেশের তুলনায় আমরাই সবচেয়ে ভালো প্রস্তুত, এই বাগাড়ম্বরের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিলই থাকবে না, তবুও থামবে না আপনাদের সাফল্যের ভাঙা রেকর্ড বাজানো।
আপনারা বলবেন, ভয়ের কিছু নেই এটা সাধারণ সর্দিজ্বরের মতো ব্যাপার আর জনগণের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলবেন, তারা অসচেতন, বিপদ ও ঝুঁকির গুরুত্ব বুঝে সতর্ক ও সাবধান হয়নি।

কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, চিকিৎসা এমনকি টেস্টের পর্যন্ত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আপনারা করতে পারেননি বা করেননি। এত বড় অতি সংক্রামক মহামারি টেস্টের
ব্যাপারটা দীর্ঘ সময় ধরে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানের মনোপলি করে রেখে পরীক্ষা ও নিরোধক কার্যক্রমকে স্থবির করে কেন রেখেছিলেন?
চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রোটেকশন ব্যবস্থাটাও সময়মতো করে রাখতে পারেননি। পিপিই এবং মাস্ক পর্যন্ত দিতে পারেন নি। বরং এগুলো নকল কিনে টাকা মেরে খেয়ে তাদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলেছেন। স্বাস্থ্যখাতে বেধড়ক চুরি-ডাকাতি, লুট-তসরুপের মচ্ছব চলেছে, অথচ সংকটাপন্ন কোভিড-১৯ রোগীদের জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারেন নি। এই দৈন্যদশা নিয়েই চাপাবাজি চালিয়ে গেছেন, আমেরিকা আমাদের কাছে চিকিৎসা সরঞ্জাম সাহায্য চাইছে। এসবের জন্য দায়ী কি আম পাব্লিক?

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা তাদের সুরক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম চাইলে সাজা দিয়েছেন। এদের বাদ দিয়ে বিদেশী ডাক্তার এনে নিয়োগ দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগের কথায় কাজে ও সিদ্ধান্তে কোনো সমন্বয় ও সামঞ্জস্য মেলেনি। এসবই কি আপনাদের দক্ষ ব্যবস্থাপনার নমুনা?
আর্মি-পুলিশকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ পাশ কাটয়ে দলীয় নেতা-কর্মীকে অবাধে চাল চুরি, তেল লুকানো সহ ত্রাণসামগ্রী লুটপাটের সুযোগ গিয়ে এ মহাদুর্যোগে গরীবকে বঞ্চিত করার নাম কি দূরদর্শিতা?
দুর্যোগ দেখেই শাসক দলের অতি কথক অধিকাংশ মন্ত্রী, এমপি, নেতা গায়েব। দু’এক জন হঠাৎ উদয় হয়ে বাণী দিয়েই গায়েব হন। কিছু জায়গায় ধানকাটায় সাহায্যের নামে ফটো সেশনে গিয়ে অনেকে কৃষকের ক্ষতি করে এসেছে। কোথাও কেউ নেই বিপন্ন জনগণের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালনে। সিটি কর্পোরেশন হাত গুটিয়ে বসা। কতকগুলো কমিটির নাম শোনা গেলেও কাজ দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী সরকারী বাসায় বসে মূলতঃ প্রশাসনিক আমলাদের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স করছেন, সরকারের উঁচু পর্যায়ের এটুকু তৎপতাই কেবল দৃষ্টিগ্রাহ্য। আর ইতোমধ্যে প্রমান হয়ে গিয়েছে যে, সাধারণ মানুষের জীবনরক্ষা নয়, অর্থনীতি ও বড় লোকদের স্বার্থ বাঁচানোই করোনাসংক্রান্ত সরকারি কৌশলের সার কথা।
আপনাদের এত সব ব্যর্থতার দায় সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপাতে এক আলেমের জানাযায় দড়ি ঢিল দিয়ে রেখে বহু লোক জড়ো হবার সুযোগ দিলেন, সে চিত্র নিয়ে এন্তার প্রচারণা চালানো হলো। ফল এলো না।
অপেক্ষা করলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়ে নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে মসজিদে জামাত শুরু করে দেয় কিনা। আপনাদের হতাশ করে এই রমজান মাসেও তারা তা করেনি। তারপর তথাকথিত সীমিত পরিসরে শর্ত সাপেক্ষে মসজিদগুলোতে জামাতের অনুমতি দিলেন। দেখা যাক, কী দাঁড়ায়। তবে ইফতারির দোকান খোলার অনুমতি দিয়েও আসল উদ্দেশ্য কিন্তু সফল হয়নি খুব একটা।
গার্মেন্টস খোলার কথা বলে লাখ লাখ কর্মীকে ঢাকা এনে আবার না খুলে গ্রামে ফেরত পাঠিয়ে জনস্রোতের চিত্র প্রচার করলেন। আবার ‘সীমিত আকারের’ কথা বলে পোশাক কারখানা খুলেছেন। সেখানে কী পরিবেশে কাজ চলছে, কতটা ঝুঁকি এড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা কে দেখছে?
আর কত চালাকির কথা বলবো? আর কত খুচরা চালাকি করবেন আপনারা?
কিছু বন্ধ কিছু খোলা, এই বন্ধ এই খোলা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের অস্থিরতা, আয়হীন মানুষের হাতে খাদ্য ও বাঁচার উপকরণগুলো পৌঁছাতে ব্যর্থতা, ছুটি না লকডাউন তা নিয়ে ধোঁয়াসা এবং এইসবের কারণে মানুষের বাইরে আসা আর এই বাইরে আসার জন্য আপনাদের সব ব্যর্থতার দায় তাদের ওপর চাপাবার চালাকি আর কত?
এখন মানুষ ঈদের সময় ঘর ছেড়ে হুমড়ি খেয়ে বেরিয়ে আসে কিনা তার অপেক্ষা চলছে। ঢাকা-খোলার খেলায় ও প্রচারিত পরিসংখ্যানের ছলচাতুরিতে বিভ্রান্ত হয়ে বা প্রয়োজনের তাগিদে বেপরোয়া হয়ে মানুষ ব্যাপক ভাবে বাইরে বেরিয়ে পড়লেই তারা সুখী হবেন। খুঁজে পাবেন দায় চাপাবার উপযুক্ত কাঁধ। উনাদের কৌশলী প্রচারবিদরা তখন সেই ছবি দেখিয়ে বলতে থাকবেন: “দেখেন অবস্থা! সরকার কী করবে? মানুষ যেখানে দলধরে আত্মহত্যা করতে চায় সেখানে সরকারের করার কিচ্ছু থাকে না রে ভাই। তাছাড়া সরকারের দোষ বেশি। রাস্তায় পিটায়ে ঘরে উঠায়ে দিলে বলতো জুলুম করা হচ্ছে। আরে মিয়া সরকার পিটায় নাই বলেই কি এমন করে বাইরে আসতে হবে? সরকার কি আপনারে জোর করে বের করেছে? বেরুতে না দিলেও তো আবার সমালোচনা করতেন।”
আমি বুঝিনা এইযে এতো খুচরা চালাকি এগুলো কাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য? আসলেই কি ধোঁকা দেয়া যায়?বিদেশ থেকে সাফল্যের সার্টিফিকেট যোগাড়যন্ত্র করে আনা যায় সত্য। কিন্তু নিজের দেশের মানুষের হৃদয়ের প্রশংসাপত্র?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক।

সর্বশেষ