২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আহ্সান উল্লাহ মাষ্টার চিরকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে- লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
৭ মে শনিবার ২০২২, শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাষ্টারের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের৭ মে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় এই নির্ভীক জনপ্রিয় নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু তিনি যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন তার কর্মে, আহ্সান উল্লাহ মাষ্টারের মৃত্যু নেই। তাঁরা মরতে পারে না। তাঁরা অজেয় চিরকাল আমাদের এই ভূবনে। আহ্সান উল্লাহ মাষ্টার চিরকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। ৯ নভেম্বর ২০২০, শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাষ্টারের ৭১তম জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এদিনে তিনি গাজীপুরের হায়দরাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক, শ্রমিকনেতা, রাজনীবিদি, সমাজকর্মী, জননেতা ও দক্ষ সংগঠক। ছিলেন- নির্লোভ, নিরোগ, নিরহঙ্কার, পরোপকারী, ও দেশপ্রেমিক। জীবনভর দিয়েছেন সব সময় উজাড় করে, নেননি কিছুই। হৃদয় দিয়েই ভালোবাসতেন সুহৃদসহ ছোট- বড় সকলকেই, যে ভালোবাসা ছিল নিখাদ, নির্ভেজাল। রাগ, ক্ষোভ, জেদ, বিরক্তি, অসহিষ্ণুতা, মুখভার এগুলোর একটিও তার মধ্যে দেখা যায়নি কোনদিন। তাঁর কথায় কিংবা ব্যবহারে কেউ আহত হয়েছেন এমন নজির নেই। সংবাদকর্মীরা ছিল তাঁর খুব কাছের তথা আত্মীয়তুল্য আপনজন, যে কোন কাজে তাঁর কাছে কেউ সহযোগিতা চেয়ে পাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার সমাজ ও মানুষের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন ও স্বপ্ন দেখতেন। সেই ভাবনা ও স্বপ্নের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল সুবিধাবঞ্চিত মেহনতি মানুষ। মেহনতি ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। তিনি মানবিক গুণাবলিতে উজ্জীবিত একজন পরিশুদ্ধ মানুষ ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি অসাম্প্রতিক চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। ৬২’র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের পাশাপাশি সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি সমাজের অসহায় মানুষের সহায়তায় তিনি সর্বদা ছিলেন নিবেদিত। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমিকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও দরদী নেতা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। ফলে তিনি শ্রমিক ও জনতার দরদী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তিনি মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে সংগ্রাম-লড়াই করেছেন। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি কখনও আপোষ করেননি। তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনে যতবার প্রার্থী হয়েছেন জনগণের বিপুল ভোটে ততবারই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার এলাকার জনগণের হৃদয় জয় করেছিলেন অকৃত্তিম ভালোবাসার মাধ্যমে। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার উপজেলা পদ্ধতি বিলুপ্ত করে দেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিয়ে আহসান উল্লাহ মাস্টার দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই জন্যে তিনি জেল, জুলুম, নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। উপজেলা পদ্ধতি বিলোপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। তারই মামলার ফলে আদালত স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক স্তর বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছিল। এই নির্দেশনা আজ দেশে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের বাস্তব ফল হিসেবে বিরাজ করছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন, পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানী বন্ধ করার দাবি নিয়ে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন প্রতিনিয়ত। দেশে যখন ত্রাস ও গ্রাসের রাজনীতির বলয় তৈরী হয়েছে তখনই শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে দেখা গেছে টঙ্গীর ও ঢাকার রাজপথে। তিনি ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৫, ১৯৯৬ সালের রাজনৈতিক পটভূমিতে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের নেতা হিসেবে যে ভূমিকা রেখেছেন তা গর্বের ও অহংকারের। আজীবন তিনি গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অবদান কখনও বিস্মৃতির গর্ভে তলিয়ে যাবে না। তাঁর আদর্শ ও কর্মে তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন।
মানুষকে আপন করে কাছে নেয়ার অমিত ক্ষমতা ছিল তাঁর। তাঁর মধ্যে ছিল এমনই শক্তি, যে শক্তির ক্ষমতায় তিনি অল্প সময়ে যে কারো মন জয় করতে পারতেন। ফলে যেখানেই তিনি অংশ নিয়েছেন, সেখানেই ছিল তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য। তিনি ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা, গণমানুষের নেতা ও শ্রমিকদের বন্ধু। সততা ও নৈতিকতা ছিল তাঁর কাছে সবার আগে। এলাকার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও অস্ত্রের ঝনঝনানির বিরুদ্ধে। মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর ছিল শক্ত অবস্থান। সব মিলিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের এতোটাই আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- যে গাজীপুরের রাজনীতিতে তাঁর বিকল্প অন্য কাউকে ভাববার কোন কথা কখনো চিন্তা করতে পারেছিলেন না স্থানীয় জনগণ। হয়তো এটাই হচ্ছে তাঁর জন্য কাল। সঙ্গত কারণেই তিনি হয়ে যান অনেকেরই ঈর্ষার কারণ। বিশেষ করে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বিপরীত মেরুর অনেকেই তাঁকে সহ্য করতে পারছিলেন না। যার ফলে অকালেই প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে। ঘাতকের বুলেট তাঁকে চিরতরে বিদায় দিয়েছে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তিনি বেঁচে আছেন- চিরকাল বেঁচে থাকবেন নিজের সততার জন্যে।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি ছিলেন আপোষহীন। সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি আমাদের দেশের আদর্শিক রাজনীতির এক উজ্জল নক্ষত্র।
তিনি বহুবিধ গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক, নির্বিরোধ, সহজ- সরল ও মিশুক একজন মানুষ। আমি নির্দ্বিধায় বলছি- জীবনে এমন কোনো পরোপকারী পরিচ্ছন্ন মানুষ দেখিনি, যাকে আহ্সান উল্লাহ মাষ্টারের কাছাকাছি বসানো যায়। সেই স্বচ্ছ ও সৎ মানুষটাই এই নষ্ট সমাজে থাকতে পারলেন না। ১৮ বছর আগে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় বক্তৃতা করার সময় প্রকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসীরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর পবিত্র স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সর্বশেষ