২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাতিল চেয়ে উকিল নোটিশ !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হারুন অর রশিদ. আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলীতে একটি ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাতিল করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া উকিল নোটিশের পরিপেক্ষিতে ইটভাটা পরিদর্শন করেছেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঞ্জুমান আরা বেগম।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (এনবিএম) নামক ওই ইটভাটাটি পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, গত ২০ আগষ্ট বরগুনা জজ কোর্টের আইনজীবি তানজিবুল হোসাইন সুজন গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ এইচএম. মনিরুল ইসলাম মনির পক্ষে পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালকে ওই আইনগত নোটিশ প্রদান করেন।

আইনজীবি নোটিশে উল্লেখ করেন আমার মক্কেলের দালিলিক তথ্য ও মৌখিক জবানবন্দি অনুযায়ী আপনি নোটিশ গ্রহীতাকে অবগত করানো যাইতেছে যে, আমতলী উপজেলার ১নং গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ নুরুল ইসলামের স্ত্রী মোসাঃ জাহানারা ইসলামকে ২০১৬ সালে পরিবেশ আইন বর্হিভূতভাবে ইটভাটা পরিচালনার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। ওই ছাড়পত্র দিয়া তিনি উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (এনবিএম) নামে একটি ইটভাটা তৈরী করিয়া পরিবেশ দুষণ করিতেছে। আপনি নোটিশ গ্রহীতা পরিবেশ ছাড়পত্র না দিলে বরগুনার জেলা প্রশাসক উক্ত ইটভাটার লাইসেন্স প্রদান করিতেন না ও নবায়নও করতেন না।

আইনে বলা আছে সিষিদ্ধ এলাকার সীমা কেয়ার হইতে নূন্যতম ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা করিলে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র প্রদান করিবেন না। বিশেষ স্থাপনা বলিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক থাকিলে কোন ক্রমেই ছাড়পত্র দেওয়া যাইবে না। ইহা ছাড়াও কতিপয় স্থানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধকরণ করা হইয়াছে। কৃষি জমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় সরকারী বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, বাগান বা জলাভূমি থাকিলে সেই ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া যাইবে না। আপনি নোটিশ গ্রহীতা উক্ত ইটভাটার স্থল পরিদর্শন না করিয়া ইটভাটার মালিক কর্তৃক অবৈধভাবে বাধ্য হইয়া পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করিয়াছেন।

উল্লেখিত ইটভাটার পূর্ব পাশে দক্ষিন পূর্ব গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। যাহা ইটভাটা থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী রহিয়াছে ইটভাটার কালো ধোয়ায় কোমলমতি শিশুরা ও শিক্ষকরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ওই ইটভাটা থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে দক্ষিন গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইট পোড়ানোর সময় কালো ধোয়ায় পরিবেশ বিনষ্ট হয়। শিশু শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টে ভোগে। এছাড়া ইটভাটার উত্তর পাশে মাত্র ১০ গজ দূরত্বে রহিয়াছে ৫০টি বসতবাড়ী। পূর্বপাশে মাত্র ২০০ ফিট দূরত্বেও রয়েছে অনেকের বসত বাড়ী। দক্ষিন পাশে মাত্র ১০০ ফিট দূরত্বে রহিয়াছে একাধিক ব্যক্তির বসত বাড়ী। ইটভাটার ধোয়ায় ওই সকল বসত বাড়ীর মালিকদের বাসা বাড়ী ছাড়িয়া দেওয়ার উপক্রম হইয়াছে।

ইট ভাটার মাটির ব্যবহারের করা ও ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি কৃষি জমির মাটি কাটিতে পারিবে না। আইনে বলা আছে যে স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা হইবে সেই স্থান পরিদর্শন করিয়া পরিবেশ অনুকূলে থাকিলে ইটভাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র প্রদান করিলে জেলা প্রশাসক লাইসেন্স প্রদান করিবেন। আপনি নোটিশ গ্রহীতা উক্ত ইটভাটার স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন না করিয়া ইটভাটার স্থানের ১ কিলোমিটারের মধ্যে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসত বাড়ী ও কৃষি জমি থাকা সত্তে¡ও আপনি উক্ত ইটভাটা স্থাপনের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছেন।

পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ এর ধারা- ১২ বলা আছে, পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতীত কোন এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহন করা যাইবে না। ওই ক্ষেত্রে সম্পূর্ন আইন বর্হিভূতভাবে সরেজমিনে তদন্ত না করিয়া পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া আইনত সঠিক হয় নাই।

অত্র লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র কেন বাতিল বা প্রত্যাহার করিয়া নেওয়া হইবে না তাহার জবাব দাখিল দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হইলো। অন্যথায় আমার মক্কেল ১নং গুলিশাখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিল বা প্রত্যাহার না করিলে অবৈধভাবে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করায় বিশেষ আদালতে মামলা করিবেন।

গত ২১ আগস্ট বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ওই উকিল নোটিশ হাতে পেয়ে নোটিশে উল্লেখিত বিষয়গুলো সরেজমিনে তদন্ত করতে আজ (বৃহস্পতিবার) একই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঞ্জুমান আরা বেগম সরেজমিনে মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (এনবিএম) নামক ওই ইটভাটাটি পরিদর্শন করতে পাঠান। পরিদর্শনের সময় তিনি স্থাণীয় ইউপি সদস্য, এলাকাবাসী ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে ইটভাটা থেকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটির দূরত্ব নির্নয় করে যথাক্রমে ৪৬২ ও ৩৯৮ মিটারের মধ্যে অবস্থিত বলে সত্যতা পায়।

ইটভাটা পরিদর্শনে আসা বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি ওই বিয়ষে কিছু বলতে পারবোনা।

ভূক্তভোগী স্থাণীয় বাসিন্দারা জানান, ইট পোড়ানোর সময় আমরা বাড়ীতে থাকতে পারিনা। কালো ধোয়ায় আমাদের ছোট ছোট বাচ্ছারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এ জন্য ইটভাটাটি দূরে কোথাও নিয়ে গেলে আমাদের জন্য ভালো হয়।

স্থাণীয় ইউপি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন খোকন বয়াতি বলেন, ইটভাটা দুই দিকে দুটি প্রাইমারী স্কুল ও তিন দিকে বেশ কিছু পরিবার বসবাস করে। ইটভাটার কালো ধোয়ায় কোমলমতি শিশু ও ভাটার পাশে বসবারত পরিবারগুলো শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ও ধোয়ায় পরিবেশ বিনষ্ট হয়। আমি চাই অবৈধভাবে নির্মিত ওই ইটভাটাটি বন্ধ করে দেওয়া হোক।

সর্বশেষ