২৪শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদের নামাজের গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুটি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা।মুসলিমদের ঈদ ও উৎসব অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আল্লাহর যিকির ও তাঁর বড়ত্বের ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রথম ও প্রধান আমল হল ঈদের নামায।অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং তাকবির ভুলে যান।
আজকের এই প্রবন্ধদে ঈদের নামাজের প্রয়োজনীয় কিছু মাসআলা নিয়ে আলোচনা করব।ইনশাল্লাহ।

ঈদের নামাযে বিধান:
✒দ্বিতীয় হিজরীতে ঈদের নামায ওয়াজিব হয়। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ঈদের নামায পড়ার বিধান নাযিল হওয়ার পর থেকে রাসূল (স.) মৃত্যু পর্যন্ত কোন বছরই কোন ঈদের নামায পড়া বাদ দেননি। তেমনি খুলাফায়ে রাশিদীনের কেউ তা বাদ দেননি। এর দ্বারা ঈদের নামায ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বর্জন করলে গুনাহাগার হবে।
ঈদের নামায দুই রাকাত। -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ১৩৪১

ঈদের নামাজের সময় :
✒চোখের দেখায় সূর্য দিগন্ত থেকে আনুমানিক দুই মিটার উচ্চতায় পৌঁছালে ঈদের নামাজ পড়া হয়। জোহর নামাজের আগেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। সুন্নাত হিসেবে ঈদুল ফিতরের নামাজ কিছুটা দেরী করে এবং ইদুল আজহার নামাজ দ্রুত আদায় করা হয়। ইদুল ফিতরে ফিতরা প্রদান করতে হয়। ঈদ সকালে কিছুটা সময় পাওয়া গেলে ফিতরা আদায়ে সুবিধা হবে। অন্যদিকে ঈদুল আজহায় ঈদের নামাজ সম্পন্ন করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী করা হয়। সেজন্য ঈদের নামাজ যত দ্রুত সম্ভব আদায় করতে হবে। এই ব্যাপারে হাদিসে সুস্পষ্ট বিধান প্রদত্ব রয়েছে

ঈদের নামাজ কোথায় পড়বে?
✒ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া সুন্নত। ঈদগাহে পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিনা ওজরে মসজিদে পড়া মাকরূহ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামায ঈদগাহেই পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামায পড়ার জন্য ঈদগাহে গমন করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯৫৬)

✒✔অবশ্য বৃষ্টির কারণে বা অন্য কোনো ওযরে যেমন জায়গা সংকুলান না হওয়া বা ঈদগাহ না থাকার কারণে মসজিদে ঈদের জামাত করা মাকরূহ নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার ঈদের দিন বৃষ্টি শুরু হল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে মসজিদে ঈদের নামায পড়েছেন।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১৬০; ফাতহুল বারী ২/৫২২; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৭; উমদাতুল কারী ৬/২৮২; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্ব ২/২৮৯

ঈদের নামাজের নিয়ম:
✒ঈদের নামায দুই রাকাত। -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ১৩৪১

✒ঈদের নামাজে আজান ও একামত নেই। হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক বার নয় দুই বার নয়; একাধিক বার ঈদের নামাজ পড়েছি তাতে আজান ও একামত ছিল না।’ -সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ১৪৭০

✒✔প্রথমে মুখে বা মনে মনে নিয়ত করে নেবে, ঈদুল-ফিতর এর দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবীরসহ ইমামের সঙ্গে পড়ছি। তাপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে নেবে এবং সানা পড়বে। তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তাকবীরে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেবে এবং চতুর্থ তাকবীরে হাত উঠিয়ে বেঁধে নেবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে প্রথম রাকাত শেষ করবে।
দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও সূরা পাঠ শেষে ইমাম যখন তাকবীর বলবেন, তার সঙ্গে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তাকবীরে হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে এবং ছেড়ে দিতে হবে। আর চতুর্থবার তাকবীর বলে হাত না উঠিয়ে সোজা রুকুতে চলে যেতে হবে। বাকিটুকু যথা নিয়মে শেষ করে খুতবা শুনে, দোয়া-মুনাজাত করে বাসা-বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।

. ✒ঈদের নামাজের সালাম ফেরানোর পর মোনাজাত করা মোস্তাহাব। ঈদের খুতবার পরে মোনাজাত করা মোস্তাহাব নয়। -মুসনাদে আহমদ: ২২১৮

ঈদের নামাজে কেরাআত:
✒ঈদের নামাজে কেরাআত সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবি নোমান ইবনে বশির (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে দেখা যায়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদ ও জুমার নামাজে প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘হাল আতাকা হাদিসুল গাশিয়াহ’ পাঠ করতেন। -সুনানে নাসাঈ: হাদিস নং ১৫৫০

✒সূরা ক্বাফ এবং সূরা ইক্বতারাবতিস্ সায়া পড়ার কথাও হাদিসে পাওয়া যায়। -সুনানে নাসাঈ: হাদিস নং ১৫৪৯

ঈদের নামাজের পূর্বে নফল:
✒ব্যক্তির কথাটি ঠিক নয়। ঈদের নামাযের আগে ঈদগাহে এবং অন্যত্রও নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে ঈদের নামাযের পর ঈদগাহের বাইরে নফল নামায পড়া যাবে।

✒✒আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযের আগে কোনো নফল নামায পড়তেন না। ঈদের পর বাড়িতে ফিরে এসে দুই রাকাত নামায পড়তেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬০; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩

ঈদের নামাজের কিছু অংশ ছুটে গেলে:
✔ক)
ইমাম সাহেবকে প্রথম রাকাতে কিরাত অবস্থায় পাওয়া গেলে তখন কী
করবে?
✔খ)
আর এক রাকাত ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কোন নিয়মে আদায় করবে?
✔গ)
ইমাম সাহেবকে তাশাহহুদে পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ঈদের নামায পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে কি? হলে এক্ষেত্রে সালামের পর দু রাকাত কীভাবে আদায় করবে?
উত্তর
✔ক) ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের কিরাত অবস্থায় শরিক হলে তাকবীরে তাহরীমার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। অতপর বাকি নামায যথানিয়মে ইমামের সাথে আদায় করবে।
✔খ)আর ঈদের নামাযের এক রাকাত ছুটে গেলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে আগে সূরা-কিরাত পড়বে এরপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। ✔গ)আর কোনো ব্যক্তি ইমামের তাশাহহুদ অবস্থায় জামাতে শরিক হলে তার নামাযও সহীহ হবে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের সালামের পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই দুই রাকাত নামায পড়বে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে। অতপর সূরা-কিরাত পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; কিতাবুল আছল ১/৩২২; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬৷

✒যদি কেউ প্রথম রাকাতে রুকুর পূর্বে জামাতে শরিক হয় এবং তাকবিরে তাহরিমার পর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলার সুযোগ না পায় তাহলে রুকুতে গিয় অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। তবে সেক্ষেত্রে কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না। -আদ্দররুল মুখতার: ১/২৭৪

✒ যদি ইমাম অতিরিক্ত তাকবিরসমূহ ভুলবশতঃ না বলে, আর ঈদের জামাত অনেক বড় হয়, তাহলে ফেতনা ফাসাদের আশংকায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। সুতরাং সিজদায়ে সাহু করবে না। আর যদি এমন হয় যে উপস্থিত সকলেই সিজদায়ে সাহু সম্পর্কে অবগত হতে পারে তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/৯২

✒ ঈদের দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর তাকবির ওয়াজিব। যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হয় তাহলে সে প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলবে। অতঃপর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। এরপর রুকুর তাকবির বলে রুকুতে শামিল হবে। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৭৪

✒শাওয়ালের দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরিয়তসম্মত কোনো কারণে ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে শাওয়ালের ২ তারিখে পড়ার অনুমতি আছে। এরপর আর নামাজ পড়া যাবে না।

খুতবার মাসয়ালা
✒ সর্বপ্রথম ঈদের নামাজ হবে তারপর খুতবা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করতেন, কোনো উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোনো নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন। আর জনগণ নামাজের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোনো বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোনো নির্দেশ জারি করার ইচ্ছা করলে তা জারি করতেন। -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ৯০৩

✒খুতবা চলাকালীন চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা ও কাজকর্ম নাজায়েয। এমনকি যিকির-আযকার, তাসবিহ-তাহলীল পড়াও নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামের খুতবার সময় তুমি যদি (কাউকে) বল, চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সহীহ বুখারী ১/১২৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ১১০৫)

✒ইবনে জুরাইজ রা. থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে আছে, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, আরাফার দিন অথবা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দেয় তখন কি লোকেরা আল্লাহ তাআলার যিকির করতে পারবে অথচ সে খুতবা শুনতে পারছে? তিনি বললেন, না। কোন ঈদেই (খুতবা চলাকালীন) কথা বলবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩, হাদীস : ৫৬৪০)

✒সুতরাং ঈদের খুতবা চলাকালীন মুসল্লীগণ তাকবীর বলবে না। বরং নিরব থেকে খুতবা শ্রবণ করবে।
-কিতাবুল আস্ল ১/৩৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৪

✒খুতবা চলাকালীন সময়ে কথাবার্তা বলা নিষেধ। এমনকি নবী করিম (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে মুখে দরূদ পড়া নিষেধ। তবে অন্তরে পড়তে পারবে। তেমনিভাবে খুতবার মধ্যে দানবাক্স বা রুমাল চালানোও নিষেধ এবং গোনাহের কাজ। -মুসনাদে আহমদ: ১০১৪০

✒নামাজের পর ঈদের দুই খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। যদি খুতবা শোনা না যায়, তাহলে চুপচাপ বসে থাকবে। অনেক লোক সালামের পর খুতবা না শুনেই চলে যায়, এটা সুন্নতের খেলাফ। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৫৯

✒উভয় খুতবা শেষ হলে ঈদের নামাজের সব কাজ শেষ হলো- এরপর ঈদের আর কোনো কাজ বাকী নাই। সুতরাং খুতবা শেষ হলে সবাই নিজের বাড়িতে ফিরে আসবে। বর্তমানে দেখা যায় যে, ঈদের খুতবার পরে লম্বা মোনাজাত হয়। এটা মোস্তাহাব নয়, তারপর লোকদের মধ্যে কোলাকুলির ভীড় লেগে যায় অথচ ঈদের সুন্নতের মধ্যে কোলাকুলি করার কথা নেই। সুতরাং এটা ঈদের সুন্নত মনে করা ভুল। বরং এটা দেখা-সাক্ষাতের সুন্নত। কোনো ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন পরে সাক্ষাত হলে প্রথমে সালাম বিনিময় করবে। পরে মোসাফাহা করবে ও কোলাকুলি করবে। সুতরাং ঈদের নামাজের পূর্বে সাক্ষাত হলে তখনই এটা সেরে ফেলবে। আর যদি ঈদের খুতবার পর এরূপ কারও সঙ্গে সাক্ষাত হয় তাহলে কোলাকুলি করবে। এরূপ করবে না যে, সাক্ষাত হলো নামাজের পূর্বে কিন্তু কোলাকুলি করা হলো- খুতবার পরে। -ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/৩৮১

মহিলাদের ঈদগাহ যাওয়া:
✒মহিলাদের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়া মাকরূহ। তবে যদি নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে।

নারীদের আসল স্থান হল তাদের বসবাসের ঘর। নারীদের মসজিদে এসে নামায পড়া রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন না। তবে যেহেতু রাসূল সাঃ সবার নবী। আর রাসূল সাঃ এর কাছে ওহী নাজিল হতো। তাই নারীরা রাসূল সাঃ এর জমানায় ওহীর বানী শুনার জন্য মসজিদে আসতো। এটি ছিল শুধুই প্রয়োজনের তাগিতে।

যে প্রয়োজন রাসূল সাঃ ইন্তেকালের দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রয়োজনীয় দ্বীন শিখা প্রতিটি নর-নারীর জন্য আবশ্যক। রাসূল সাঃ ছিলেন সেই দ্বীনের বাহক। তাই রাসূল সাঃ এর সময়ে যেহেতু সময়ে সময়ে দ্বীনের বিধান অবতীর্ণ হতো, তাই পুরুষ সাহাবীদের সাথে মহিলা সাহাবীরাও রাসূল সাঃ এর দরবারে এসে সেই দ্বীন শিখতে চেষ্টা করতেন। সেখানে পুরুষ নারী এক সাথে হওয়ার কারনে কোন ফিতনার আশংকা ছিল না।

কিন্তু বর্তমানে সেই আশংকা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদের ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেন। এটা না জায়েজ নয়, তবে মাকরূহ। সেই সাথে ইসলামের মূল স্পিরিটের বিপরীত পদ্ধতি। কারণ ইসলামের মূল থিউরী হল নারীরা থাকবে বাড়িকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে। রাস্তাঘাটে অবাধে বিচরণ এটা তাদের কাজ নয়। নিম্নের হাদীসগুলো দেখুন-

عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز و جل

আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেনহে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী সাঃ বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে। তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত।
সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯,
ইলাউস সুনান-৩/২৬।

এ হাদীস কি প্রমাণ করছে? মহিলারা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামায পড়বে এ নির্দেশ কার? যদি রাসূল সাঃ নারীদের মসজিদে আসাকে অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে সেখানে আমি কে যে, তাদের মসজিদে আসা/ঈদগাহে আসা পছন্দ করবো?

আরেকটি হাদীস দেখি

عن أبي عمرو الشيباني أنه رأى بن مسعود يخرج النساء من المسجد ويقول أخرجن إلى بيوتكن خير لكن

হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১,
মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১
আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫।

ভাল করে খেয়াল করুন। আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ অপছন্দ করেন, আমরাও তা অপছন্দ করি। যে বঞ্চনা রাসূল সাঃ এর প্রিয় সাহাবীর আমল। সেটি আমাদের গলার মালা। যদিও সেটি সাহাবা বিদ্বেষীদের অপছন্দ হয়ে থাকে।

عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ.

হযরত আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল সাঃ এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে? তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে।

ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন-হ্যাঁ।

সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২
মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০

এবার ভেবে দেখুন-রাসূল সাঃ এর তিরোধানের পর মুসলিম নারীরা এমন কি পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন? আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?

উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা পরিস্কার যে, মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে আসা মাকরূ
وصلي الله على نبيك محمد وآله واصحابه اجمعين،

লেখক:

মুফতী মাহমুদ হাসান

সর্বশেষ