২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একজন দেশপ্রেমিক স্বপ্নদ্রষ্টা যখন পথপ্রদর্শক

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরিশাল বাণী:
“তোমরা ব্রিটিশ পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানের পুলিশ নও, তোমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ।” হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশের উদ্দেশ্যে এই কথাটি বার বার বলতেন। বঙ্গবন্ধুর এই কথাগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করে পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন একজন দেশপ্রেমিক স্বপ্নদ্রষ্টা, যখন যেখানে যেভাবে জনসেবায় নিয়োজিত ছিলেন সেখানেই কর্মের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন একজন আদর্শ পথপ্রদর্শক, একজন অভিভাবক, একজন পিতা। সহকর্মীদের কাছে হয়ে ওঠেন একটি আদর্শ , একটি বিস্ময়, একটি প্রত্যাশার নাম। একটি অগ্নিশিখার মত নিজের আলোয় আলোকিত করেন পুরো একটি ইউনিট। পেশাগত জীবনে মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য ইতিমধ্যেই দেশ যাকে তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ দু-দুবার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদকে ভূষিত করেন।

হ্যাঁ, আমি আমার ইউনিট প্রধানের কথা বলছি, আমি একজন ডায়নামিক লিডার এর কথা বলছি। আমি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সুযোগ্য কমিশনার জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন খান, বিপিএম(বার) মহোদয়ের কথা বলছি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিট প্রধান হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার ডায়নামিক নেতৃত্বে পাল্টে যেতে থাকে বরিশাল মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তথা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমূর্তি। পেশাদারিত্ব ছাপিয়ে জনমনে পুলিশ হয়ে উঠে মানুষের প্রথম ভরসাস্থল তথা আস্থার মূর্তমান প্রতীক।বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশকে একটি জনমুখী, সেবাধর্মী, স্মার্ট, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সর্বোপরি একটি মানবিক পুলিশ ইউনিট হিসেবে কার্যকর করার জন্য যোগদানের পর থেকেই তিনি বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে আমূল বদলে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তথা বরিশাল মহানগর পুলিশের ভাবমূর্তি।

সরকারি-বেসরকারি যেকোন সেক্টরে, বিশেষ করে সেবা খাতে সেবার মান নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো, সেবাদাতার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। পুলিশিং সেবা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হওয়া সত্ত্বেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়েছেন বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ ।

একটু বুঝিয়ে বলছি, সাদা কাপড়ে কোন দাগ লাগলে সেটা যেমন খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়ে, স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তেমনি পুলিশি সেবায় পান থেকে চুন খসলে সাথে সাথেই পুলিশের উপর মানুষের বিরূপ ধারণা চলে আসে। ধরুন, পুলিশের সংস্পর্শে কোন সমস্যা নিয়ে যদি দুজন ব্যক্তি বা দুটো পক্ষ আইনি সেবা পেতে আসেন। সে সময় পুলিশ যদি শতভাগ ন্যায়ের পক্ষে থেকে আইনানুগ ভাবে সেবা প্রাপ্য ব্যক্তি বা পক্ষকে সেবা প্রদান করেন; সেক্ষেত্রে অপর পক্ষ পুলিশের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যান ! এভাবেই পুলিশের সংস্পর্শে আসা সকল মানুষের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ পুলিশের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের কাছে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেয়।

আবার, মহামান্য আদালতে সম্মানিত বিচারকগণ কোন মামলার রায় প্রদানের জন্য কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ করে, উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর বা যে কোন নির্দিষ্ট সময়ের পর মামলার রায় ঘোষণা করেন । এক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে রায় প্রদানের জন্য মহামান্য বিচারকের কাছে যথেষ্ট উপাদান ও সময় থাকে। কিন্তু পুলিশ এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যখন তাকে দুই থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে বিচারকের ন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সময় স্বল্পতার জন্য, যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ না থাকার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ কখনো কখনো সঠিক নাও হতে পারে! তখনই পুলিশের উপর মানুষের বিরূপ ধারণা চলে আসে।

এদেশের অনেক মা-বোনরা এখনো তার ছোট শিশুকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, খাবার খাওয়ায়। এতে করে শিশুর মস্তিষ্কে ছোটবেলায়ই পুলিশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা বাসা বাঁধে। এমন অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায় কিন্তু উদাহরণ দিয়ে সময় নষ্ট করাটা সমীচীন হবে না।এতগুলো কথা বলার উদ্দেশ্য হলো পুলিশিং কার্যক্রম এতটা স্পর্শ কাতর পেশা হওয়া সত্ত্বেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয় বরিশাল মহানগরীর সকল থানায় “ওপেন হাউজ ডে” কার্যক্রম চালু করেন। যেখানে স্বয়ং ইউনিট প্রধান এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ থানার সকল অফিসার ফোর্স এর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার সকল শ্রেণী-পেশার লোকজন ও ভুক্তভোগীরা উপস্থিত হয়ে তাদের যে কোন সমস্যা, এমনকি তা যদি হয় কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সেটাও বলতে পারেন। ওপেন হাউজ ডে তে ভুক্তভোগীদের উত্থাপিত সমস্যা সংক্রান্তে কী কী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা পরবর্তী ওপেন হাউজ ডে তে জনগণের সামনে জবাবদিহিতা করা হয়। দেশের আর কোন কোন সেক্টর ইউনিট প্রধানের উপস্থিতিতে জনগণের তথা ভুক্তভোগির সামনে বসে এভাবে তাদের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা করে সেটা আপনারাই ভাল জানেন? পুলিশের কাছ থেকে কোন সাধারণ জনগণ বা ভুক্তভোগী যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করেছেন অভিযোগ বক্স। যেখানে ভুক্তভোগীরা চাইলে তাদের যেকোন সমস্যার কথা কিংবা যে কোন অসঙ্গতির কথা গোপনেই জানাতে পারেন।

জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশিসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ডে-ইউনিয়নে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, ইমাম-পুরোহিত, নারী-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ, জনপ্রতিনিধিসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে শক্তিশালী ও কার্যকরী কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন করে প্রতিটি কমিটিতে একজন করে থানা থেকে অফিসার নিয়োগ করা হয়। মাসে অন্তত একবার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটি পুলিশিং সভার আয়োজন করা হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে ভুল করে অপরাধের পথে পা না বাড়ায়, পথভ্রান্ত না হয়, বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য থানা থেকে অফিসার পাঠিয়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার জন্য কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা নেন। অপরাধ নিবারণ ও সংগঠিত অপরাধ উদঘাটনের লক্ষ্যে পুরো বরিশাল মহানগরের সকল নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছেন।মহানগরীতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পয়েন্ট সহ পুরো বরিশাল মহানগরী কে নিয়ে এসেছেন সিসি ক্যামেরার আওতায়। চলমান বৈশ্বিক মহামারীর শুরু থেকে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত যেসব অসহায় হতদরিদ্র মানুষ আত্মসম্মানের ভয়ে কারো কাছে ত্রাণ সাহায্য চাইতে পারেনি, তাদেরকে রাতের আধারে গোপনে পৌঁছে দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাহায্য। যা এখনো চলমান।

সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে মহামারীর সময় লকডাউন বাস্তবায়ন, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরন, আইসোলেশন নিশ্চিতকরন, করোনা আক্রান্ত রোগীর বাসায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া, করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, প্রীয়জন ও নিকট আত্মীয় স্বজন ফেলে রেখে যাওয়া করোনা আক্রান্ত লাশের দাফন-কাফন কার্যক্রমসহ সকল ধরনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সকল পুলিশ আক্রান্ত হয়ে পুলিশি ব্যবস্থা যেন ভেঙে না পড়ে সে জন্য শুরু থেকেই বিচক্ষণতার সাথে গ্রহণ করেছেন নানামুখী কার্যকরী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইইডিসিআর কর্তৃক ঘোষিত যে স্বাস্থ্য বিধিমালা সেগুলো মেনে চলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সকল স্তরের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্য উপকরণ ও সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করেন। ইউনিটের মোট জনবল কে তিনটি ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা রাখার ব্যবস্থা করেন । যাতে করে পুলিশের কোনো সদস্য আক্রান্ত হয়ে পুরো বাহিনীতে সেটা ছড়িয়ে না পড়ে এবং পুলিশিং ব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে। তদুপরি একজন দায়িত্ববান পিতার মত, যারা মানবসেবায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করানো, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো, চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, তাদের সাথে কথা বলে তাদের মানসিক মনোবল দৃঢ় রাখা। প্রতিনিয়ত কথা বলে আক্রান্ত সদস্য সহ তার পরিবারের সকল সদস্যের মনোবল চাঙ্গা রেখেছেন। এক কথায় একজন পিতা তার সন্তানকে সকল ধরনের আপদ-বিপদ থেকে যেভাবে আগলে রাখেন, ঠিক সেইভাবে মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগ থেকেই মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয় তার সকল সদস্যদের কে আগলে রেখেছেন।

যে সমস্ত সদস্য করোনা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন, কাজে যোগদানের পূর্বে তাদের সকলকে দিয়েছেন সংবর্ধনা। মানুষের জীবন বাঁচাতে মানব কল্যাণে করোনা বিজয়ী সদস্যদের মোটিভেশন করে তাদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন প্লাজমা ডোনার গ্রুপ।

শুধু তাই নয় মহানগরীর যেকোনো বাসিন্দা, যে কোন মানুষ, যে কোন সময় কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তার দর্শন লাভ করতে পারেন। পুলিশ সদস্যদের কে ভাল কাজে উৎসাহিত করার জন্য যেমনি তিনি তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন; তেমনি খারাপ কর্মের জন্য কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন।

পুলিশ সদস্যদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য নিয়মিতভাবে ধর্মযাজক দিয়ে কাউন্সেলিং করিয়ে তাদের নৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত করছেন। পুলিশ সদস্যদের কে সরবরাহ করেছেন সকল ধরনের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইইডিসিআর কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধিমালা মেনে চলার জন্য নিয়েছেন যথাযথ পদক্ষেপ। করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে স্বয়ং নিজে কথা বলে আক্রান্ত কালীন সময়ে আক্রান্ত সদস্য ও তার পরিবারের মনোবল ধরে রেখেছেন। পুরো ইউনিট এর যেকোনো সদস্যের যেকোনো সমস্যায় খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় তার কাছে।সত্যিকার অর্থে তিনি একজন হ্যামিলনের-বাঁশিওয়ালা।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতই ভালো সদস্য তথা মানুষের কল্যাণে যেমনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তেমনি কতিপয় বিপদগামী সদস্য তথা অপরাধীদের এনেছেন কঠোর শাস্তির আওতায়। এভাবেই বদলে যাচ্ছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিবার।

লেখক: এসআই (নিঃ) তানজিল আহমেদ

সর্বশেষ